শুধু ক্যালসিয়াম নয়
হাড় মজবুত রাখতে দরকার সূর্যালোক, শরীরচর্চা ও সুষম খাবার
প্রকাশ: ২০:০১, ৯ অক্টোবর ২০২৫

বয়স চল্লিশ পেরোতেই হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যায়—বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। অধিকাংশ মানুষই ধরে নেন, প্রতিদিন একটি ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেলেই হাড়ের ক্ষয়রোধ সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, বিষয়টা এত সহজ নয়। হাড় মজবুত রাখতে হলে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি দরকার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, নিয়মিত শরীরচর্চা, আর স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
ক্যালসিয়াম যথেষ্ট নয় কেন?
অস্টিওপোরোসিস এমন একটি রোগ যেখানে হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে তা দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। সামান্য আঘাতেই তখন হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। চিকিৎসকরা বলছেন—শুধু ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানো যায় না, কারণ শরীর সেই ক্যালসিয়াম পুরোপুরি শোষণ করতে পারে না। এজন্য ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি দরকার ভিটামিন ডি, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
ভিটামিন ডি: ক্যালসিয়ামের সঙ্গী
ভিটামিন ডি ক্যালসিয়াম শোষণকে সহায়তা করে। শরীরে এই ভিটামিনের অভাব থাকলে আপনি যতই ক্যালসিয়াম খান না কেন, তার সিংহভাগই অপচয় হয়ে যাবে। তাই প্রতিদিন অন্তত ১৫-২০ মিনিট সকালের নরম রোদে থাকা, এবং তৈলাক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, ভিটামিন ডি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন।
শরীরচর্চার বিকল্প নেই
চিকিৎসকরা বলেন, ভারবহনকারী ব্যায়াম—যেমন দ্রুত হাঁটা, দৌড়, সিঁড়ি ওঠানামা—হাড়ের কোষকে সক্রিয় রাখে ও ঘনত্ব বাড়ায়। একই সঙ্গে স্ট্রেংথ ট্রেনিং করলে পেশি শক্ত হয়, ফলে পড়ে গিয়ে হাড় ভাঙার ঝুঁকি অনেকটা কমে।
খাদ্যতালিকায় প্রোটিন ও খনিজ
হাড়ের গঠন ক্যালসিয়াম ছাড়াও আরও কিছু উপাদানের উপর নির্ভরশীল। যেমন—ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস: পালং শাক, বাদাম, কুমড়োর বীজ ও বিনসে প্রচুর পরিমাণে থাকে।
ভিটামিন কে: শাকসবজিতে পাওয়া যায়, যা হাড়ের কোষে খনিজ জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।
প্রোটিন: হাড়ের প্রায় অর্ধেক অংশই প্রোটিন দিয়ে তৈরি, তাই মাছ, ডিম, ডাল, সয়াবিন ও মুরগির মাংসের মতো খাবার অপরিহার্য।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অপরিহার্য
ধূমপান ও অতিরিক্ত মদ্যপান ক্যালসিয়াম শোষণ ব্যাহত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয়। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, ওজন ঠিক রাখা—এসব অভ্যাসও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অস্টিওপোরোসিস রোধে শুধু ক্যালসিয়াম নয়, চাই সূর্যালোক, সুষম আহার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট কেবল এক অংশমাত্র; হাড়ের সামগ্রিক যত্নের মূলমন্ত্র হলো “সমন্বিত স্বাস্থ্যচর্চা”। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিন্তু হাড়ের যত্নে নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে।