পোষাপ্রাণী থেকেও শিশুদের শরীরে ছড়াতে পারে ভয়ংকর রোগ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:০৯, ৯ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:১০, ৯ অক্টোবর ২০২৫

কুকুর-বিড়াল আমাদের প্রিয় সঙ্গী হলেও শিশুদের জন্য কিছু সংক্রমণ বিপজ্জনক হতে পারে। সচেতন থাকলেই মিলবে সমাধান।
বাড়ির উঠোনে বা ফ্ল্যাটের ঘরে ছোট্ট শিশুর সঙ্গে আদরের কুকুরছানা বা বিড়ালের খেলা মন ভরিয়ে দেয়। পোষ্যরা শিশুর একাকিত্ব দূর করে, তাদের দায়িত্বশীল ও সংবেদনশীল করে তোলে। কিন্তু এই স্নেহভরা বন্ধুত্বের মাঝেও আছে এক অজানা আশঙ্কা—পোষ্যদের শরীর থেকে শিশুদের শরীরে ছড়াতে পারে বিভিন্ন রোগ। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘জুনোটিক ডিজিজ’, অর্থাৎ প্রাণীদেহ থেকে মানুষের দেহে সংক্রমিত রোগ।
শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায়, তারা পোষ্যের সংস্পর্শে এলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে ভয় নয়, সচেতনতা আর নিয়ম মেনে চললেই বিপদ এড়ানো সম্ভব।
সাধারণ কিছু রোগ ও তাদের উৎস
১. কৃমি সংক্রমণ:
সবচেয়ে সাধারণ জুনোটিক সংক্রমণ। কুকুরের মল থেকে গোলকৃমি বা বক্রকৃমির লার্ভা মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। শিশুরা সেই মাটিতে খেলাধুলা করে হাত না ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করলে কৃমি শরীরে প্রবেশ করে। এর ফলে হতে পারে পেটে ব্যথা, রক্তাল্পতা ও অপুষ্টি।
২. ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ:
বিড়ালের আঁচড় বা কামড়ে ‘বারটোনেলা হেনসেলি’ নামক ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। এতে ক্ষতস্থান ফুলে যায়, জ্বর আসে এবং লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে।
৩. টক্সোপ্লাজমোসিস:
বিড়ালের মল থেকেই এই পরজীবীঘটিত রোগ ছড়ায়। বিশেষত যদি বিড়াল বাইরে যায় বা কাঁচা মাংস খায়। সংক্রমিত মল পরিষ্কারের সময় অসাবধান হলে এটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৪. দাদ বা রিংওয়ার্ম:
এটি এক ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। সংক্রমিত কুকুর বা বিড়ালের সংস্পর্শে এলে শিশুর ত্বকে লালচে চাকা চাকা দাগ দেখা যায়।
৫. জলাতঙ্ক বা র্যাবিস:
সবচেয়ে ভয়াবহ জুনোটিক সংক্রমণ। কুকুর, বিড়াল বা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর কামড়ে ছড়ায়। সময়মতো প্রতিষেধক না নিলে এটি শতভাগ প্রাণঘাতী।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন
চিকিৎসকরা বলছেন, আতঙ্ক নয়—নিয়ম মেনে চললেই নিরাপদ থাকবেন শিশুরাও, পোষ্যও।
১. পোষ্যের নিয়মিত টিকাকরণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। নির্দিষ্ট সময় অন্তর কৃমিনাশক ওষুধ দিন।
২. শিশুকে শেখান হাত ধোয়ার অভ্যাস। বিশেষ করে পোষ্যকে ছোঁয়ার পর ও খাবার আগে।
৩. পোষ্যের মলমূত্র পরিষ্কার করার সময় গ্লাভস ব্যবহার করুন। স্থানটি জীবাণুমুক্ত রাখুন।
৪. শিশুদের পোষ্যের মুখে মুখ দেওয়া বা খাবার ভাগাভাগি করতে দেবেন না।
৫. বাইরে ঘোরার পর পোষ্যকে পরিষ্কার করুন, যাতে বাইরে থেকে জীবাণু ঘরে না আসে।
পোষ্য আর শিশুর সম্পর্ক নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় ভরা। তাই ভয় না পেয়ে, নিয়ম মেনে চললেই এই বন্ধুত্ব হবে আরও নিরাপদ, সুরক্ষিত এবং নির্মল।