দৈহিক স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করে কফি
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:২৭, ১২ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০০:৩৭, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

স্থূলতা (ওবেসিটি) আধুনিক সমাজের একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা, যা ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ এবং অন্যান্য জটিলতার সঙ্গে যুক্ত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, কফির মতো সাধারণ পানীয়ের স্বাস্থ্য উপকারিতা নিয়ে গবেষণা বেড়েছে, বিশেষ করে এর ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা। বাংলাদেশে দৈহিক স্থূলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিরাজমান। এই লেখায়, আমি এই গবেষণাটির বিস্তারিত আলোচনা করব, এর ফলাফলের ব্যাখ্যা দেব এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক গবেষণার সাথে যুক্ত করে কফির স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সম্ভাব্য ভূমিকা তুলে ধরব। এছাড়া, এর সীমাবদ্ধতা এবং বাস্তবায়নের পরামর্শও দেব।
কফি কীভাবে স্থূলতার উপর প্রভাব ফেলে
১. মেটাবলিজম ও শক্তি ব্যয় বৃদ্ধি
• ক্যাফেইন কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে।
• এটি থার্মোজেনেসিস বাড়ায়, যার ফলে বিশ্রামের সময়ও শরীর বেশি শক্তি খরচ করে।
• ফ্যাট অক্সিডেশন বা চর্বি পোড়ানোর প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়।
এর মানে, নিয়মিত কফি খেলে ক্যালরি ব্যয় কিছুটা বাড়তে পারে।
২. ক্ষুধা ও ক্যালরি গ্রহণে প্রভাব
• কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কফি ক্ষুধা কমাতে ও খাদ্যগ্রহণ দেরি করতে পারে।
• বিশেষত ব্ল্যাক কফি (চিনি/ক্রিম ছাড়া) ক্ষুধা দমন করে।
• তবে সবার ক্ষেত্রে সমান প্রভাব দেখা যায় না।
৩. ইনসুলিন সংবেদনশীলতা ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ
• কফির ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গ্লুকোজ শোষণ ধীর করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
• দীর্ঘমেয়াদি কফি সেবন টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে পারে, যা স্থূলতার সাথেও সম্পর্কিত।
৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ কমানো
• স্থূলতার কারণে শরীরে প্রায়শই নিম্নমাত্রার প্রদাহ দেখা দেয়।
• কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ কমাতে ও কোষের ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।
সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি
১. অতিরিক্ত কফি (প্রতিদিন >৪ কাপ)
• অনিদ্রা, স্নায়বিক উত্তেজনা, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, রক্তচাপ বাড়ানো ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।
২. চিনি, দুধ বা ক্রিম মেশালে
• কফির ক্যালরি অনেক বেড়ে যায়, যা স্থূলতা কমার পরিবর্তে বাড়াতে পারে।
• উদাহরণ: ১ কাপ ব্ল্যাক কফি = ~২ ক্যালরি, কিন্তু ১ কাপ লাটে/ক্যাপুচিনো = ~১২০–২৫০ ক্যালরি।
৩. সহনশীলতা তৈরি হওয়া
• নিয়মিত উচ্চমাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ করলে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যায়, ফলে মেটাবলিজম বাড়ানোর প্রভাব কমতে পারে।
৪. ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা
• জেনেটিক্স, লিভারের ক্যাফেইন বিপাক প্রক্রিয়া, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি কারণে কফির প্রভাব ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
স্বাস্থ্যকর উপায়
• প্রতিদিন ২–৩ কাপ ব্ল্যাক কফি (চিনি/ক্রিম ছাড়া) গ্রহণ করা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও কার্যকর।
• কফিকে সহায়ক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত, প্রধান চিকিৎসা নয়।
• ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—
• সুষম খাদ্যাভ্যাস
• নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম
• পর্যাপ্ত ঘুম
• মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
পরিশেষে, কফি পরিমিত মাত্রায় সেবন করলে মেটাবলিজম বাড়াতে, ক্ষুধা কিছুটা কমাতে, ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক হতে পারে। তাই স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে কফি একটি সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে অতিরিক্ত কফি সেবন ঝুঁকিপূর্ণ এবং একে কখনোই স্বাস্থ্যকর জীবনধারার বিকল্প হিসেবে দেখা উচিত নয়।