রাজধানীতে শুক্রবার শুরু হচ্ছে আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩:০৬, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৩:১১, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
রাজধানীতে আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা। ছবি: আয়েজকদের সৌজন্যে
রাজধানীর শীতের শুরুতে আবারও জমে উঠছে বর্ণিল এক উৎসব—আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলা ২০২৫। আগামী শুক্র ও শনিবার মিরপুর ১৩–তে পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘ কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী এই বিশেষ আয়োজন।
উন্নয়ন সংগঠন নাগরিক উদ্যোগ এবং আদিবাসী সুহৃদদের যৌথ উদ্যোগে টানা চার বছর ধরে এই মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। আয়োজকদের ভাষায়—এটি শুধু একটি খাদ্য মেলা নয়, বরং পাহাড়–সমতলের হাজার বছরের খাদ্যঐতিহ্য ও কৃষিবৈচিত্র্যকে শহুরে সমাজের সামনে তুলে ধরার এক অনন্য সম্মিলন।
নাগরিক উদ্যোগের পক্ষে মেইনথিন প্রমীলা সমাজকালকে জানান, স্টল বরাদ্দের ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের পর থেকেই ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। পাহাড়ি অঞ্চলের পাশাপাশি সমতলের মান্দি, মনিপুরী, সাঁওতাল ও রাখাইন সম্প্রদায়ের অসংখ্য উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে স্টল বুক করেছেন।
সবচেয়ে উৎসাহজনক বিষয় হলো—স্টল বুকিংয়ে অগ্রাধিকার ধরে রেখেছেন আদিবাসী নারী উদ্যোক্তারা। রাজধানীর ভোজনরসিকদের কাছে সুপরিচিত পাহাড়ি নারীদের উদ্যোগে পরিচালিত “হেবাং রেস্তোরাঁ”-ও এবার মেলায় স্টল সাজাচ্ছে।
মেলায় এবারের বড় আকর্ষণ পাহাড়ি খাবারের সমৃদ্ধ সংগ্রহ। থাকবে ঐতিহ্যমণ্ডিত তেল–মসলামুক্ত রন্ধনপ্রণালির খাবার, যা আদিবাসীদের স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যসংস্কৃতিকে নতুনভাবে চিনিয়ে দেবে।
পাহাড়ি ব্যাম্বু শুট, কলাপাতায় রান্না করা বিভিন্ন পদ, জনপ্রিয় হেবাঙ, জুমের তাজা সবজি, পাহাড়ি মুরগি, কাপ্তাই হ্রদের মাছ—সব মিলিয়ে এক অবারিত স্বাদের উৎসব। পাবেন পার্বত্য অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার পাজন–এর স্বাদও।
সমতলের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রান্নার বৈচিত্র্যও সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে মেলায়। মনিপুরী, গারো, রাখাইন উদ্যোক্তারা নিয়ে আসছেন তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের পসরা। থাকবে কালো ও সাদা বিনি চাউলের তৈরি নানা রকম মুখরোচক পিঠা, আর বাঙালিদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের মুণ্ডি।

মেলার বিশেষ আকর্ষণ পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বাঁশের হুক্কা—‘বাঁশ দাবা’। পাশাপাশি থাকবে টাটকা ফলের তৈরি ঝাল আইটেম ‘লাকসো’, যা পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।
জুমের শাকসবজি, তাজা ফলমূল, বৈচিত্র্যপূর্ণ শস্য, বিভিন্ন জাতের বিনি চাউল ও পাহাড়ি মধুও পাওয়া যাবে মেলায়। অনেক উদ্যোক্তা আসবেন নিজেদের উৎপাদিত শুঁটকি, জুমের কৃষিপণ্য ও ঘরোয়া খাদ্যপণ্য নিয়ে।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী সমাজকালকে বলেন, শহুরে সমাজকে আদিবাসীদের সমৃদ্ধ কৃষিসংস্কৃতি, বিশেষ করে জুম কৃষিপণ্যের সঙ্গে পরিচয় করানোর উদ্দেশ্য থেকেই এই মেলার আয়োজন। আদিবাসী উদ্যোক্তারা যেন আরও বেশি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেন—এই তাগিদও আমাদের রয়েছে।
মেলার অন্যতম আয়োজক মেন্টল চাকমা জানান, বাংলাদেশের বহুত্ববাদী খাদ্যসংস্কৃতির একটি বিশাল অংশ হলো আদিবাসীদের রন্ধন ঐতিহ্য। সেই বৈচিত্র্যের সঙ্গে বাঙালিদের খাদ্যাভ্যাসের মিলন ঘটানোই এই মেলার লক্ষ্য।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে মনোজ্ঞ আদিবাসী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। গান শোনাবেন বাংলাদেশ আইডল মং, পাহাড়ি জনপ্রিয় শিল্পী জলিপ্রু মারমা, সমান্তর চাকমা, কুলিন চাকমা এবং গারোদের উদীয়মান গায়ক মার্কুস চিসিম। নৃত্যপরিবেশনায় অংশ নেবেন পাহাড় ও সমতলে বসবাসকারী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা।
যেভাবে পৌঁছাবেন
মেট্রোরেল মিরপুর ১০ স্টেশন থেকে রিকশায় মাত্র পাঁচ মিনিটেই পৌঁছানো যায় পার্বত্য বৌদ্ধ সংঘ কমপ্লেক্সে। পাশে রয়েছে স্কলাস্টিকা ও এসওএস শিশু পল্লী; বিপরীতে বিআরটিএ কার্যালয়।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আয়োজিত হওয়ায় আয়োজকদের বিশ্বাস, এবারও আদিবাসী খাদ্য ও শস্য মেলায় ভিড় হবে উপচে পড়া। বৈচিত্র্যময় স্বাদ ও সংস্কৃতির মিলনে দুই দিনের এই উৎসব রাজধানীবাসীর জন্য হয়ে উঠবে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
