ধানমন্ডি ৩২–এ যান চলাচল স্বাভাবিক, চার স্তরের নিরাপত্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৯, ১৮ নভেম্বর ২০২৫
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান। ছবি: সমাজকাল
জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়ি ভাঙতে গেলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ফলে মিরপুর–নিউমার্কেট সড়কে কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। রাত সাড়ে ১০টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
রাতে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মিরপুর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনের সড়কে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে ইটের টুকরো। রাত ১১টার দিকে সড়কটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়ার আগেই বিভিন্ন দল–সংগঠনের কর্মীরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে সমবেত হন। দুপুরের দিকে দুইটি বুলডেজার নিয়ে তারা ব্যারিকেড ভেঙে বাড়িটির ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
এই সময় সেনাবাহিনী সড়কে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের ঠেকিয়ে দেয়। বাধা পেয়ে তারা ‘মুজিববাদ মুর্দাবাদ’, ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘ছাত্রলীগের আস্তানা ভেঙে দাও’— এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুর ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা একটি বুলডেজার নিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের দিকে ইটপাটকেল ছোড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিক্ষোভকারীরা সড়ক ফাঁকা হওয়ার পর আবার ফিরে আসে—এমন দৃশ্য বারবার দেখা গেছে।
বিকেলে র্যাব ও বিজিবি যোগ দেওয়ায় নিরাপত্তা আরও জোরদার হয়। রাতেও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ চলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঢাকা কলেজের সামনে থেকে ৩২ নম্বর সড়কের দিকে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া বন্ধ করতে সেনা–পুলিশ নতুন করে ব্যারিকেড স্থাপন করে। প্রায় আট ঘণ্টা অচলাবস্থার পর রাত ১০টার পর নিউমার্কেট–মিরপুর সড়কে যান চলাচল খুলে দেওয়া হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক সাংবাদিকদের জানান— “বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। রাতেও পুলিশ সতর্ক থাকবে।”
সোমবার রায় ঘোষণার আগের রাত থেকেই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার আহ্বান জানানো হয়। এর আগেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় আগুন লাগানো এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
