দিরহামের কাছে রুপির পতন, ক্রমাগত পতন হচেছ
ভারতীয় প্রবাসীরা নতুন কৌশলে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২১, ৮ অক্টোবর ২০২৫

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় প্রবাসীরা এবার রুপির পতনে তেমন উত্তেজনা দেখাচ্ছেন না। দুবাই ও আবুধাবির মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো জানাচ্ছে—রুপি দরপতনের পরও রেমিট্যান্স প্রবাহ স্থিতিশীল, আগের মতো হঠাৎ ভিড় বাড়েনি।
গত সপ্তাহে ভারতীয় রুপি ডলারের বিপরীতে প্রায় এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে — ১ ডলারের বিপরীতে ৮৮.৭২ রুপি, যা দিনের মধ্যে ৮৮.৮০ পর্যন্ত ছুঁয়েছিল। ডলারের বিপরীতে দুর্বলতার পাশাপাশি দিরহামের বিপরীতেও রুপির দর কমে প্রতি দিরহাম ২৪.১৮ রুপি, যা বছরের শুরুতে ছিল ২৩.৪০ রুপি। অর্থাৎ, রুপি মূল্যহ্রাস পেয়েছে প্রায় ৩.৫ শতাংশ।
প্রবাসীদের কৌশল: “এখন সবাই হিসাব করে পাঠাচ্ছে টাকা”
আইবিএমসি ফাইন্যান্সিয়াল প্রফেশনালস গ্রুপের গ্রুপ সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সজিত কুমার পি.কে. বলেন,“আগে রুপি পড়লেই প্রবাসীরা হুড়োহুড়ি করে টাকা পাঠাত। এখন তারা অনেক বেশি সচেতন। অনেকে ট্রান্সফার ভাগ করে পাঠাচ্ছে, একবারে বড় অঙ্কে নয়।”
বারজিল জিওজিট সিকিউরিটিজের পরিচালক কে. ভি. শামসুদ্দিন বলেন,“এখন সবাই বুঝে গেছে যে রুপি ধীরে ধীরে নিচে নামছে। তাই কেউ তাড়াহুড়া করছে না। রেট আরও নিচে নামতে পারে—এই মনোভাব থেকেই স্থিতিশীলতা এসেছে।”
পরিবর্তিত প্রবণতা: ‘নতুন স্বাভাবিক’ মেনে নিয়েছে প্রবাসীরা
২০১৮ ও ২০২২ সালে রুপি দুর্বল হলে প্রবাসীরা ব্যাপক অঙ্কে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এবারকার পতন ছিল পূর্বাভাসযোগ্য ও ধীরগতি।
২০২৪ সালে ভারত ১২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল—যার প্রায় অর্ধেকই এসেছিল উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫ সালে এই প্রবাহ শক্ত থাকবে, তবে আগের মতো উল্লম্ফন হবে না।
রিজার্ভ ব্যাংকের ধাঁধা ও ভারতের লাভ
রুপির ধারাবাহিক পতন রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াকে (আরবিআই) কঠিন অবস্থায় ফেলেছে।
অতিরিক্ত হস্তক্ষেপ করলে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমবে, আবার সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পড়তে দিলে বাড়বে আমদানি-ভিত্তিক মূল্যস্ফীতি।
তাই আরবিআই “নিয়ন্ত্রিত অবমূল্যায়ন” নীতিতেই থাকতে পারে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন।
তবে রুপির দুর্বলতা ভারতের চলতি হিসাবের জন্য কিছুটা আশীর্বাদও—এতে রেমিট্যান্স রুপি মূল্যে বেড়ে যায় এবং রপ্তানি পণ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়।
রুপির দরপতনে এবার আতঙ্ক নয়, বরং অভিজ্ঞতা ও শৃঙ্খলা দেখাচ্ছে প্রবাসী ভারতীয়রা। আগের মতো ভিড় না বাড়লেও, তাদের এই কৌশলগত আচরণই ইঙ্গিত দিচ্ছে—গালফ প্রবাসীরা এখন আর বাজারের ঢেউয়ে নয়, নিজেদের হিসাবেই এগোচ্ছেন।
সূত্র: খালিজ টাইমস