এপেক সম্মেলনে জিনপিংয়ের পাঁচ দফা প্রস্তাব
চেইন ভাঙা নয়, হাত মেলানো দরকার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:২০, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
 
						চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়ংজু শহরে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা—এপেকের ৩২তম অধিবেশনে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে ভাষণ দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতা জোরদারে দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
শি বলেন, “বর্তমান আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ক্রমশ অস্থির ও জটিল হয়ে উঠছে। এই সময়ে ‘চেইন ভাঙা’র বদলে ‘হাত মেলানো’ দরকার।” বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় খোলা উন্নয়ন ও পারস্পরিক সহযোগিতাকে তিনি সময়ের দাবি বলে উল্লেখ করেন।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল আজ অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। “আমাদের উচিত এপেকের মূল লক্ষ্য—অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি ও জনগণের কল্যাণ উন্নত করা—এই আদর্শে অবিচল থাকা।”
তিনি আরও বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সঙ্গত উন্নয়নই আমাদের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারে।”
ভাষণে শি জিনপিং পাঁচটি মূল প্রস্তাব তুলে ধরেন—
বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা: ডব্লিউটিও-ভিত্তিক বৈশ্বিক বাণিজ্য কাঠামোর কার্যকারিতা ও ন্যায্যতা বাড়াতে সব দেশের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
উন্মুক্ত আঞ্চলিক অর্থনীতি গঠন: বিনিয়োগ উদারীকরণ ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংহতি বাড়ানো।
শিল্প ও সরবরাহ শৃঙ্খলের স্থিতিশীলতা: ‘হাত মেলানো’র নীতি মেনে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা জোরদার করা।
ডিজিটালাইজেশন ও সবুজায়ন: প্রযুক্তিনির্ভর টেকসই বাণিজ্য কাঠামো গড়ে তোলা এবং সবুজ শক্তি বিনিয়োগ বাড়ানো।
অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন: এমন উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাতে প্রত্যেকে সমানভাবে উপকৃত হয়।
জিনপিং বলেন, “চীন ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে থাকবে এবং নতুন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র উন্মুক্ত করবে।” তিনি জানান, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পণ্যের ওপর শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে।
চীনের ১৫তম পাঁচসালা পরিকল্পনা আরও গভীর সংস্কার ও আধুনিকায়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং আয়োজক হিসেবে শি জিনপিং, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিসহ ২১টি দেশের নেতাদের স্বাগত জানান।
দুই দিনব্যাপী এই এপেক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, কানাডা, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়াসহ ২১টি সদস্যদেশ অংশ নিচ্ছে।
আলোচনার মূল বিষয়—বাণিজ্য, সরবরাহ চেইন নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জনসংখ্যা সমস্যা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সংযোগ নিয়েও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
এপেকের অধীনে “ডিজিটাল ব্রিজ ইনিশিয়েটিভ” চালু করেছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যার লক্ষ্য সদস্যদেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রবাহ ও প্রযুক্তিগত সংযোগ বাড়ানো।
যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনকে বর্ণনা করেছে—“অর্থনীতি নয়, এটি হলো মূল্যবোধের মঞ্চ।”

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													