সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যে শেহবাজ শরিফের ঘোষণা
আফগান শরণার্থীদের বোঝা আর বইতে পারবে না পাকিস্তান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:১৯, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঘোষণা করেছেন, দেশটি আর আফগান শরণার্থীদের বোঝা বহন করতে পারবে না। সীমান্তে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, শরণার্থীদের তাৎক্ষণিকভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে, এবং আর কোনও সময়সীমা বাড়ানো হবে না।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির, বিভিন্ন প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। প্রধানমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান আফগানিস্তানের অস্থিতিশীলতার কারণে দশকের পর দশক প্রাণ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করেছে—“সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে আমরা হাজারো প্রাণ হারিয়েছি, অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে বিলিয়ন ডলার,” বলেন তিনি।
শেহবাজ শরিফ উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানে হামলা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “কাবুলকে বারবার অনুরোধ করার পরও তারা নিজেদের মাটি থেকে পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতা রুখতে ব্যর্থ হয়েছে।”
সরকারি তথ্যমতে, ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত ১৪,৭৭,৫৯২ জন আফগান নাগরিক স্বেচ্ছা বা বাধ্যতামূলকভাবে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। বৈঠকে জানানো হয়, যারা বৈধ পাকিস্তানি ভিসাধারী নয়, তারা দেশে থাকতে পারবে না। সীমান্তে একাধিক এক্সিট পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে, যাতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।
অবৈধভাবে আফগানদের আশ্রয় দেওয়া বা অতিথিশালায় রাখাও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে সরকার নির্দেশ দিয়েছে—বয়স্ক, নারী, শিশু ও সংখ্যালঘুদের প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রাখতে হবে।
২০২১ সালে তালেবান পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে সীমান্ত অতিক্রম করে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাবুলের সঙ্গে পাকিস্তানবিরোধী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর আর্থিক ও লজিস্টিক সংযোগ রয়েছে। পাকিস্তান বহুবার আফগান সরকারকে তাদের মাটি সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করতে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় থেকে শুরু করে ২০২১ সালে তালেবান শাসন প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। অনেকেই পাকিস্তানেই জন্ম ও বেড়ে উঠেছেন। তবে ২০২৩ সালের পর থেকে ইসলামাবাদ ধীরে ধীরে অবৈধ আফগানদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫.৫ লাখ আফগান দেশে ফিরে গেছেন, যার মধ্যে শুধু আগস্ট মাসেই ছিল ১.৪৫ লাখ।
শেহবাজ শরিফ বলেন, “আমরা মানবিকতা দেখিয়েছি, কিন্তু এখন জনগণ জানতে চায়—কখন এই বোঝা শেষ হবে।” তিনি প্রাদেশিক সরকারগুলোকে নির্দেশ দেন, “সম্মানের সঙ্গে, কিন্তু দৃঢ়ভাবে শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।”
তিনি সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদারে।