শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

| ৩ কার্তিক ১৪৩২

মাদাগাস্কারে সেনাশাসন প্রতিষ্ঠা

কর্নেল মাইকেল রান্দ্রিয়ানিরিনা নতুন প্রেসিডেন্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭:৩১, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

কর্নেল মাইকেল রান্দ্রিয়ানিরিনা নতুন প্রেসিডেন্ট

মাদাগাস্কারে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সেনাবাহিনীর কর্নেল মাইকেল রান্দ্রিয়ানিরিনা দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর ২০২৫) রাজধানী আনতানানারিভোর উচ্চ সাংবিধানিক আদালতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তার নিয়োগ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করা হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পানি ও জ্বালানি সংকট নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে কমপক্ষে ২২ জন নিহত ও ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। রাজধানীসহ একাধিক শহরে সরকারি দপ্তর, গুদাম ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে বিক্ষোভ হয়, যা পরিণত হয় সহিংসতায়। এরপর সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়—তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর আদেশ প্রত্যাখ্যান করবে। এর পরই দ্রুত পরিবর্তন আসে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে।

দেশটির উচ্চ সাংবিধানিক আদালত শুক্রবার রান্দ্রিয়ানিরিনার প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। 

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে রান্দ্রিয়ানিরিনা বলেন—“আজ আমাদের দেশ একটি ঐতিহাসিক মোড় নিয়েছে। জনগণের পরিবর্তনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও দেশের প্রতি ভালোবাসাই এই নতুন যাত্রার সূচনা।”

তিনি আরও ঘোষণা দেন যে, ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এবং একটি “সর্বসম্মত প্রধানমন্ত্রী” নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। তাঁর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা, রয়টার্স ও এপি জানায়, নতুন প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর সহায়তায় দায়িত্ব নিলেও, তিনি “অভ্যুত্থান” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি—সাংবিধানিক প্রক্রিয়াই তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান করেছে। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার শিবির এটিকে “সরাসরি সামরিক দখল” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং সাংবিধানিক আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।

রাজোয়েলিনার সমর্থকরা দাবি করছেন, তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজছিলেন, কিন্তু সেনাবাহিনী তার আগেই ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়। এ নিয়েই দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত তাঁর দেশত্যাগে বাধ্য করে।

আফ্রিকান ইউনিয়ন মাদাগাস্কারকে সাসপেন্ড করেছে, আর জাতিসংঘ নতুন সরকারের পদক্ষেপকে “অসংবিধানিক” বলে আখ্যা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্ক বার্তা দিয়েছে—যদি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়া হয়, তবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, মাদাগাস্কারের বর্তমান পরিস্থিতি আফ্রিকার সাম্প্রতিক সেনাশাসনের ধারাবাহিকতা—যেমন নাইজার, গিনি বা মালি। সেখানে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক সংকট সামরিক হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরি করেছে।

নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার। বিদ্যুৎ, পানি ও খাদ্যসংকটে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ এখন বাস্তব পরিবর্তন দেখতে চায়। রান্দ্রিয়ানিরিনা বলেছেন,“আমরা অতীতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছি। আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর প্রশাসন।”

তবে দেশজুড়ে বিক্ষোভ এখনো পুরোপুরি থামেনি। বিরোধীরা দাবি করছে, সেনাশাসন নয়—জনগণের ভোটে গঠিত সরকারই মাদাগাস্কারের প্রকৃত ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন