শীর্ষ ৯ জেনারেলকে বরখাস্ত করল চীনা কমিউনিস্ট পার্টি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:০৯, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

ছবি: গেটি ইমেজেস
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি দেশটির নয়জন শীর্ষ জেনারেলকে একযোগে বরখাস্ত করেছে। একইসঙ্গে তাদের সামরিক বাহিনী থেকেও অপসারণ করা হয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে এটিই চীনা সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বড় একক শুদ্ধি অভিযান বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে— “গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের” কারণে এই নয়জন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে এই পদক্ষেপ শুধু দুর্নীতি বিরোধী অভিযান নয়, বরং রাজনৈতিক শুদ্ধিকরণের অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
পার্টির অভ্যন্তরে চলমান ক্ষমতার পুনর্বিন্যাস এবং প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ‘নিরঙ্কুশ আনুগত্য’ নীতির সঙ্গে এই সিদ্ধান্তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরখাস্ত হওয়া জেনারেলদের তালিকা:
১. হি ওয়েইডং – সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) ভাইস চেয়ারম্যান
২. মিয়াও হুয়া – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের পরিচালক
৩. হে হংজুন – সিএমসির রাজনৈতিক বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর
৪. ওয়াং জিউবিন – সিএমসির জয়েন্ট অপারেশন কমান্ড সেন্টারের এক্সিকিউটিভ ডেপুটি ডিরেক্টর
৫. লিন জিয়াংইয়াং – ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডার
৬. কিন শুতং – সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
৭. ইয়ুআন হুয়াজি – নৌবাহিনীর রাজনৈতিক কমিশনার
৮. ওয়াং হৌবিন – রকেট ফোর্সেস কমান্ডার
৯. ওয়াং চুনিং – আর্মড পুলিশ ফোর্স কমান্ডার
এদের অধিকাংশই তিন তারকা জেনারেল এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
এই সিদ্ধান্ত এসেছে এমন এক সময়, যখন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে দেশটির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ও নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই বরখাস্তের মাধ্যমে পার্টি অভ্যন্তরে ‘নিষ্ঠা পরীক্ষা’র সংকেত দেওয়া হয়েছে।
চীনে সামরিক বাহিনীর বাজেট বিশাল। তবে বহু বছর ধরেই অস্ত্র সরবরাহ, অবকাঠামো নির্মাণ ও রকেট প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত খাতে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। বিশেষ করে রকেট ফোর্স ইউনিটে কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার হঠাৎ নিখোঁজ বা বদলি হওয়া এরই প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
চীনের ভেতরে এটি কেবল আর্থিক দুর্নীতির প্রশ্ন নয়, বরং রাজনৈতিক সততার ‘টেস্ট কেস’। বিশ্লেষকদের মতে, এটি প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে পার্টির অভ্যন্তরে “শুদ্ধিকরণ বনাম ভয়ের রাজনীতি”-র মিশ্রণ।
উপসংহার:
চীনের সেনাবাহিনীতে এই নাটকীয় পদক্ষেপ দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামি সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য পার্টির কেন্দ্রীয় অধিবেশন এখন আরও আলোচিত হয়ে উঠেছে — কারণ, সেখানে সি চিন পিং হয়তো এই অভিযানকে “দলের আনুগত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা” হিসেবে তুলে ধরবেন।