দোহা আলোচনার মধ্যেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান উত্তেজনা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৪৩, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

দোহায় শান্তি আলোচনা চলার মধ্যেই পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে আবারও সহিংসতা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। নিহতদের মধ্যে আফগান জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক তারকা ক্রিকেটারদেরও থাকার খবর পাওয়া গেছে। এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার দিবাগত রাতে হওয়া হামলায় তিনজন ক্রিকেটারসহ মোট আটজন প্রাণ হারান।
কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনার টেবিলে বসতে দুই দেশ সম্মত হলেও ময়দানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। আফগান সরকারের অনুরোধে পাকিস্তান সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু এই সময়েই সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ ও বিমান হামলা শুরু হওয়ায় আলোচনার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আফগানিস্তান এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
আফগান অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে “জাতীয় ট্র্যাজেডি” বলে উল্লেখ করেন।
সূত্র বলছে, পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে দোহায় পৌঁছেছে এবং আফগান প্রতিনিধি শনিবার যোগ দেওয়ার কথা। তবে নিরাপত্তা মহল জানিয়েছে, পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল শনিবার সকালেই রওনা দেবে—দোহায় এখনো কেউ পৌঁছেনি। এই পরস্পরবিরোধী তথ্য দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অবিশ্বাস আরও গভীর করছে।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শfফকাত আলি খান জানান, সীমান্তের চলমান উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে দুপক্ষ গঠনমূলক সংলাপে রয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েক ডজন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের সামরিক মিডিয়া উইং জানায়, সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা শহীদ হয়েছেন। প্রতিশোধ হিসেবে কান্দাহার ও কাবুলে লক্ষ্যভিত্তিক হামলা চালানো হয় এবং একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করা হয়েছে।
ইসলামাবাদের দাবি, আফগান মাটিতে সক্রিয় ভারত-সমর্থিত তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) ১২ অক্টোবর পাকিস্তানে হামলা চালায়। এর জবাবে পাকিস্তানি সেনারা ২০০-র বেশি আফগান তালেবান ও সংশ্লিষ্ট যোদ্ধাকে হত্যা করে। পাকিস্তান টিটিপিকে “ফিতনা আল-খারিজ” নামে চিহ্নিত করেছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ জানান, “আমরা যুক্তিসঙ্গত শর্তে তালেবান প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বল তাদের কোর্টে।”
অন্যদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আফগান প্রশাসনের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাঁচ বছর ধরে পাকিস্তানের প্রচেষ্টা ও ত্যাগের পরও কাবুলের পক্ষ থেকে ইতিবাচক জবাব মেলেনি। আফগানিস্তান এখন ভারতের প্রক্সি হয়ে গেছে।”
তিনি এক্সে দেওয়া পোস্টে দাবি করেন, ভারত, আফগানিস্তান ও টিটিপি একত্রে পাকিস্তানে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে। তার ভাষায়, “যারা একসময় পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল, তারাই এখন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।”
খাজা আসিফ বলেন, “পাকিস্তানে থাকা সব আফগানকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। শুধুমাত্র বৈধ ভিসাধারীরাই থাকতে পারবেন। আমাদের ভূমি ও সম্পদ পাকিস্তানের ২৫ কোটি নাগরিকের জন্য।”
তিনি জানান, কাবুলের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিস্তৃত ছিল—এর মধ্যে রয়েছে,
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪টি সফর, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও আইএসআই প্রধানের ২টি সফর, বিশেষ প্রতিনিধির ৫টি সফর, পররাষ্ট্র সচিবের ৫টি সফর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ১টি সফর, ৮টি যৌথ সমন্বয় বৈঠক, ২২৫টি সীমান্ত পতাকা বৈঠক, ৮৩৬টি প্রতিবাদ নোট এবং ১৩টি কূটনৈতিক বার্তা বিনিময়।