শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

| ৩ কার্তিক ১৪৩২

আফগানিস্তান ভারতের দোসর, কাবুলকে হুঁশিয়ারি খাজা আসিফের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক 

প্রকাশ: ১৩:১০, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

আফগানিস্তান ভারতের দোসর, কাবুলকে হুঁশিয়ারি খাজা আসিফের

পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দানা বাঁধছে। আফগান ভূখণ্ড থেকে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর হামলার অভিযোগে ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ এবার সরাসরি কাবুলকে ‘ভারতের প্রক্সি’ বলে আখ্যা দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ শুক্রবার এক সতর্কবার্তায় বলেছেন, “যেখান থেকেই পাকিস্তানে সন্ত্রাস আসবে, সেখানে দিতে হবে তার ভারী মূল্য।”

৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর খাজা আসিফ এক পোস্টে জানান, পাকিস্তান আর আগের মতো আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে না।
তিনি বলেন, “সম্মানিত জাতি কখনো অন্যের জমি বা সম্পদের ওপর নির্ভর করে বাঁচে না। আফগানরা এখন তাদের নিজস্ব খিলাফত সরকারের অধীনে আছে—তাদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।”

তিনি আরও জানান, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তান ৮৩৬টি প্রতিবাদ নোট ও ১৩টি আনুষ্ঠানিক ‘ডিমার্শ’ পাঠিয়েছে কাবুল প্রশাসনের কাছে, কিন্তু তাতে কোনো ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এখন আর কোনো প্রতিনিধি দল কাবুল পাঠানো হবে না, বরং সন্ত্রাসের উৎসস্থলেই ‘মূল্য আদায়’ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি।

খাজা আসিফ অভিযোগ করেন, আফগান সরকার এখন ভারতের প্রভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং দিল্লি ও নিষিদ্ধ টিটিপি-এর সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আসিফের দাবি, “যে তালেবান নেতারা একসময় আমাদের আশ্রয়ে ছিল, তারাই এখন ভারতের কোলে বসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে,” 
তবে তার এসব বক্তব্যের পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

এই কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই পাকিস্তানের বিমান হামলায় তিন আফগান ক্রিকেটার নিহত হওয়ার অভিযোগ তোলে কাবুল। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি) এক বিবৃতিতে জানায়, পাক সেনাবাহিনীর “ক cowardly attack”-এ পাকতিকা প্রদেশের উরগুন জেলার তিন ক্রিকেটার—কবির, সিবঘাতুল্লাহ ও হারুন—নিহত হয়েছেন।

এর পরপরই তারা পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে নভেম্বরের ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। আফগান তারকা রশিদ খান এক্স-এ লেখেন,“নিরীহ নাগরিকদের ওপর বিমান হামলা অনৈতিক ও বর্বর। এই সময়ে আমাদের জাতীয় মর্যাদা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।”

আসিফের মন্তব্যে পরিষ্কার, ইসলামাবাদ এখন দুই সীমান্তে চাপ অনুভব করছে—একদিকে ভারতের সঙ্গে পুরনো উত্তেজনা, অন্যদিকে পশ্চিম সীমান্তে আফগানিস্তান ও টিটিপি-এর হামলা। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে ১০ হাজারেরও বেশি সন্ত্রাসী হামলায় ৩,৮৪৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তান-আফগান উত্তেজনা এই মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার বড় হুমকি হয়ে উঠছে। তালেবান প্রশাসনকে নিয়ে পাকিস্তানের ‘কৌশলগত গভীরতার’ নীতি এবার উল্টো ফল দিচ্ছে—যেখানে একসময় আশ্রয় দেওয়া তালেবানই এখন ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। এর সঙ্গে ভারতকে জড়িয়ে আসিফের অভিযোগ আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আরও উসকে দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এখন দোহায় দু’পক্ষের বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে—যদি শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা প্রশমনের কোনো রাস্তা খোলে।

এ সম্পর্কিত খবর

আরও পড়ুন