দীর্ঘ ৯ মাস পর উন্মুক্ত সেন্ট মার্টিন, কিন্তু জাহাজও গেল না, পর্যটকও নেই
শহিদুল ইসলাম, উখিয়া–টেকনাফ
প্রকাশ: ১১:০৬, ১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৩:৪৫, ১ নভেম্বর ২০২৫
দীর্ঘ নয় মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে উন্মুক্ত হলো দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে দীর্ঘদিন পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ থাকার পর শনিবার (১ নভেম্বর) থেকে দ্বীপে পুনরায় পর্যটক যাতায়াত শুরু হয়েছে। তবে নভেম্বর মাসজুড়ে শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি থাকায় প্রথম দিনেই পর্যটকদের আগ্রহ ছিল খুবই কম।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কক্সবাজার–সেন্ট মার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল। ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ ও ‘বার আউলিয়া’ নামের দুটি জাহাজ ছাড়ার কথা থাকলেও পর্যটকের সাড়া না মেলায় মালিক সমিতি চলাচল স্থগিত ঘোষণা করেছে।
স্কোয়াব (সী ক্রুজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ )-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর সমাজকালকে জানান, “রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ থাকায় কেউ যেতে চায় না। কক্সবাজার থেকে যাত্রা করে বিকেলেই ফিরে আসতে হবে—এতে ঘোরার সময়ই থাকে না।”
তিনি আরও বলেন, “ইনানী ঘাট থেকে ছাড়ার অনুমতি পেলে সময় কিছুটা কমানো যেত। এখন এত দীর্ঘ সাগরপথে কেউ যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।”
সরকারের নির্দেশনায় নতুন নীতিমালা
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম জানান, “সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আজ থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত উন্মুক্ত করা হয়েছে। এবারে টেকনাফ নয়, সরাসরি কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণ ও যাতায়াত নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।”
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে দ্বীপে রাত্রীযাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে সীমিত পরিসরে রাত কাটানোর অনুমতি দেওয়া হতে পারে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন নিবন্ধন ও কিউআর কোড বাধ্যতামূলক
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড জানিয়েছে, সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে প্রতিটি পর্যটককে অনলাইনে অনুমোদিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট ও ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করতে হবে। টিকিটে থাকা কিউআর কোড প্রবেশের সময় স্ক্যান করে যাচাই করা হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিটকে নকল হিসেবে গণ্য করা হবে।
তবে সি ক্রুজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, “ট্যুরিজম বোর্ডের নিবন্ধন সফটওয়্যার এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। এতে যাত্রী নিবন্ধনে জটিলতা দেখা দিতে পারে।”
কঠোর নজরদারি ও পরিবেশ সংরক্ষণ
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন সমাজকালকে জানান, “সেন্ট মার্টিনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমরা প্রস্তুত। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিক নিষিদ্ধকরণ, প্রবাল সংগ্রহ ও অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণে কড়া নজরদারি থাকবে।”
স্কোয়াব সভাপতি তোফায়েল আহম্মদ সরকারের কড়াকড়ির সমালোচনা করে বলেন, “এভাবে কড়াকড়ি করলে সেন্ট মার্টিনবাসীর মৌলিক অধিকার খর্ব হচ্ছে। পর্যটক না গেলে স্থানীয়দের জীবিকা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা পর্যটন নয়, তামাশা।”
পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে ২০২৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছিল। দীর্ঘ নয় মাস পর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের জন্য পুনরায় দ্বীপ উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ভ্রমণকারীদের মানতে হবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জারি করা ১২টি কঠোর নির্দেশনা, যার মধ্যে রয়েছে—বর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ, প্রবাল স্পর্শ বা সংগ্রহে নিষেধাজ্ঞা, ও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বীপ ত্যাগের বাধ্যবাধকতা।
