জামায়াত ক্ষমতায় গেলে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ নির্মূল: আমির
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:৪৭, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি: সমাজকাল
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কোনো সম্পদশালীর সম্পদ কেড়ে নেবে না, বরং তাদের সম্পদের পাহারাদারি করবে জানিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাপ-দাদার জমিদারি ও ব্যবসায়ীদের ভাড়াটিয়া ভাবা সমস্ত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের সমাজ থেকে তাড়াবো, নির্মূল করবো’। যেসব পেশায় নারী-বোনরা নিয়োজিত, সেসব জায়গায় তাদেরকে সম্মান ও পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও অঙ্গীকার করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে জামায়াতের কাফরুল দক্ষিণ থানার প্রীতি সমাবেশে ডা. শফিক বলেন, ‘জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কোনো চাঁদাবাজের অস্তিত্ব রাখা হবে না। কেউ শিল্পপতি, ব্যবসায়ীর কাছে গিয়ে বলার সাহস পাবেন না যে, এলাকায় ব্যবসা করতে হলে আমাদের দিকে চাইতে হবে, আমাদের দেখতে হবে, আমাদের কথা শুনতে হবে, আমাদের চাহিদা পূরণ করতে হবে’।
ব্যবসা-বাণিজ্যে চাকরি-বাকরিতে নারী-বোনদের অংশগ্রহণ এখন যেভাবে হচ্ছে, তার চেয়ে আরো ভালো হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমেরিকায় একটা বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, ইনসাফের দাবি পূরণ করতে গিয়ে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়া হবে। অনেকে এটার ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। একটি মিটিংয়ে সবকিছু বলা যায় না। চিন্তা-ভাবনা না করে এ কথা তো আমরা বলিনি। আমরা চিন্তা করেই বলেছি। কেন? একজন নারী তিনি একজন শুধু নারী নন, শুধু একজন কর্মজীবী নন, তিনি একজন মা। সভ্যতার তিনি কেন্দ্রবিন্দু। একজন নারী ঠিক তো পরিবার ঠিক, পরিবার ঠিক তো রাষ্ট্র ঠিক’।
নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে কি হবে, তার বিবরণ দিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘তারা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে কাজ করবেন। পাঁচ ঘণ্টা পরে তিনি তার সন্তানের কাছে ফিরে যাবেন। সন্তানকে সময় দেবেন, লালন-পালন করবেন। পরিবারের অন্য দায়িত্ব পালন করবেন। এটাও তো সমাজেরই কাজ’।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আশঙ্কা করা হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কেউ গাছে কাঁঠাল রেখে গোপে তেল দিচ্ছেন। মাসল আর ব্যাগ মানির মাধ্যমে অন্যের ভোট হাইজ্যাক করবেন। তাদের প্রতি আমাদের স্পষ্ট বার্তা, আমরা যুবক হয়ে বিস্ফোরিত হবো’।
তিনি বলেন, ‘যুবকদের ভোট নিয়ে কেউ কাড়াকাড়ি করুক, তা আমরা বরদাশত করবো না। যুবকেরা তোমাদের ভোট তোমরা দেবে। আমরা তোমাদের পাশে থেকে লড়াই করবো। তোমাদের সাহস এবং শক্তি দেব। কোনো ডাকাত তোমাদের বুকের দিকে হাত বাড়ানোর যেন দুঃসাহস না দেখায়। এখন থেকে সেভাবে যুবকদের থাকতে হবে’।
তরুণ যুবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘তোমার যাকে পছন্দ তাকে ভোট দিও। আমাকে দেবে না দেবে, এটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু তোমার বুকের জন্য আমরা লড়ে যাব’।
শেখ হাসিনার মামলার রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়ে মজলুমানের কান্না কিছু হলেও থামবে। স্বজনহারা পরিবারগুলো সাময়িক কিছু সান্ত্বনা পাবে। তবে আমরা মনে করি, এই বিচার ন্যায়বিচারের মানদণ্ডে হয়েছে। কারণ, স্পষ্ট লাইভে এই বিচার সম্প্রচার করা হয়েছে। আমরা সরকার এবং বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানাবো যে, আপনার তার উপযুক্ত পদক্ষেপ নিন’।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। আমরা কারো ওপর কোনো অবিচার চাই না। প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার আছে ন্যায়বিচার পাওয়ার। তাদেরও কারো ওপর অবিচার হোক, সেটাও আমরা চাই না’।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যদি চাঁদা মুক্ত হয়ে যায় বাংলাদেশ, তাহলে দেশের অগ্রগতি লাফিয়ে লাফিয়ে সামনের দিকে যাবে। এখন যে দ্রব্যমূল্য তা অর্ধেকে নেমে আসবে। চাঁদার জ্বালায় ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত হোলসেলার থেকে শুরু করে রিটেইলার এমনকি ফুটপাতের আমার একজন সাধারণ ব্যবসায়ী ভাই একজন হকার সেও চাঁদাবাজদের কবল থেকে মুক্ত নয়। আমরা তাদের কথা দিচ্ছি ভাই তোমাদের ফুটপাতে ব্যবসা করতে হবে না, ব্যবসা তোমরা সম্মানের সঙ্গে করবা এবং সেই জায়গায় তোমাদের করে দেওয়া হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আর কোনো চাঁদাবাজ গিয়ে তোমাদের ডিস্টার্ব করার সাহস করবে না।
তিনি বলেন, আমাদের দ্বিতীয় প্রায়োরিটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমাদের লড়াই শুরু হয়েছে এই লড়াই থামবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি একদম মাটিতে নেমে না আসছে। এখন দুর্নীতি আকাশচুম্বী। সমাজের রন্ধ্রে-রগে, শিরায় উপশিরায়, ধমনিতে সব জায়গায় এখন দুর্নীতি। এই দুর্নীতির বিষবাষ্প থেকে এই সমাজকে বের করে আনতে হবে। কোনো বাধার হিমালয় পর্বত আমাদের গতি থামাতে পারবে না, আমরা থামবো না।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘আমাদের অঙ্গীকার, সমাজে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। বিশেষ করে নিরীহ মানুষ কোনো বিচারই পায় না। বিচারের ক্ষেত্রে কারো মুখ দেখে কোনো বিচার হবে না। আমিও যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে কোনোদিন আল্লাহর ইচ্ছায় থাকি, আর এরকম কোনো অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িয়ে যাই, আমার প্রতিও যেন ন্যায়বিচার হয়।
তিনি বলেন, বিচারকেরা সম্মানের আসনে থাকবেন। একসময় তাদের ভীষণ সম্মান ছিল। সাধারণ একজন ম্যাজিস্ট্রেটও তিনি সাধারণ বাজারে ঢুকতেন না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশতেন না। কেউ কোনোভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো আনডিউ প্রিভিলেজ অবৈধ কোনো সুযোগ নিয়ে নিতে পারে। এই জন্য তারা বাজার-টাজার করতেন না। এখন সেই ডিগনিটিটা নেই। এখন অনেকের অবস্থা খুবই কাহিল। আর বিচার করতে করতে শেষ পর্যন্ত পালাতে গিয়ে অনেকে কলাপাতায় ঘুমায়। একজন বিচারপতি সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় পৌঁছার কথা। কেন তাকে অপমানিত হতে হলো।
‘আমাদের তৃতীয় প্রায়োরিটি হচ্ছে আমাদের সমস্ত অর্থব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে, ব্যাংক বীমা কর্পোরেশন সেক্টর ইন্ডাস্ট্রি সব লুট হয়ে গেছে উজাড় হয়ে গেছে আমরা জনগণের সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার লড়াই করবো। কতটুকু পারব জানি না কিন্তু লড়াই করবো। ভবিষ্যতে আর কোনো দুর্বৃত্ত জনগণের সম্পদে যাতে হাত না দিতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে এবং দুর্নীতির জড় কেটে দেওয়া হবে’।
কূটনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হচ্ছে- বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। আমাদের একেবারেই সাফ কথা, আমরা সব দেশের সাথে, সভ্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করব। কিন্তু কারোই প্রভুত্ব আমরা মেনে নেব না। একটি স্বাধীন দেশ যেভাবে তার স্বাধীন রাষ্ট্রনীতি থাকার কথা, সেই স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি আমরা গড়ে তুলবো’।
