অবৈধভাবে আনা ফোন বন্ধ করা হবে: ফয়েজ তৈয়্যব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:৩০, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:১৯, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
অবৈধভাবে ও অবৈধ ফোন আনা বন্ধ করা হবে: ফয়েজ তৈয়বের কঠোর বার্তা। ছবি: ফেসবুক
অবৈধ ফোনের মাধ্যমে অন্তত ১৩ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। এ জন্য অবৈধভাবে আনা ও অবৈধ ফোন বন্ধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
বিশেষ সহাকারী বলেছেন, ‘আমরা ক্লোন করা, অবৈধভাবে আমদানিকৃত ও চোরাচালানকৃত ফোন বন্ধ করবো ইনশাল্লাহ। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
বুধবার (১৯ নভেম্বর) মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষ সহকারী এ কথা বলেন। একই সাথে নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টেও তিনি এসব কথা তুলে ধরেন।
অবৈধ ফোনের মাধ্যমে কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়, তার একটি তালিকা দিয়েছেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তারমতে, অবৈধ ফোনের সাথে কম করে হলেও নিম্নলিখিত অপরাধগুলো সংশ্লিষ্ট—
–সিমের ভুল রেজিস্ট্রেশন/eKYC এবং সিম সংক্রান্ত অপরাধ,
–জুয়ার লিংক এবং এমএলএম প্রতারণার বাল্ক এসএমএস পাঠানো,
–ভুল এমএফএস রেজিস্ট্রেশন/eKYC এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিং সংক্রান্ত অপরাধ,
–অনলাইন জুয়া ও স্ক্যামিং,
–অবৈধ ক্লোন ফোন সংক্রান্ত অপরাধ,
–প্যাটেন্ট ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন রয়্যাল্টি না দেওয়া,
–আয়কর ও শুল্ক ফাঁকি,
–ভারত ও চীন থেকে অবৈধ আনবক্সড মোবাইল ফোন আমদানি
–বিমানবন্দরের লাগেজ পার্টি,
–সীমান্ত চোরাচালান
–স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন শিল্প বিকাশকে বাধা দেওয়া,
–চুরি যাওয়া ফোন উদ্ধার, ছিনতাই
–হারানো ফোন ফেরত ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিশেষ সহকারী বলেন, “অর্থাৎ নাগরিক, সমাজ, অর্থনীতির ও রাষ্ট্রের বহু স্তরের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার নানাবিধ বিষয় জড়িত এখানে। এর জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিডা, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি, ব্যাংকিং খাত, বিএফআইইউ এবং এনবিআর-এর ক্রমাগত অনুরোধ আছে আমাদের ওপর। উপরন্তু মোবাইল ব্যাংকিং, ইন্টারনেট এবং টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য এটা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “ট্যাক্স না দিয়ে তারা ১ বছর আগেই কোটি খানেক ফোন এনে অবৈধভাবে ডাম্পিং করে ফেলবে দেশকে, তা হবে না আর। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলছি, কোনো মোবাইল ব্যবসায়ী বা দোকানদের ‘পেটে-লাথি’ দেওয়া হচ্ছে না, উনারা দেশীয় উৎপাদকদের এবং বৈধভাবে আমদানি করা ফোন বিক্রি করবেন, সৎ পথে ব্যবসা করবেন। অবৈধভাবে আনা ফোন, অবৈধ ফোন আনা বন্ধ করা হবে।”
বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “জেনে অবাক হবেন যে, বর্তমানে ১টা ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইক্যুয়েপমেন্ট আইডেন্টিটি (আইএমইআই) কোডের বিপরীতে লাখ লাখ ফোন বানিয়ে বানিয়ে দেশে ঢুকাচ্ছে তারা। এজন্য এনইআইআর (ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার) বন্ধে চোর ও মাফিয়া চক্র উঠেপড়ে লেগেছে। এসব লাগেজ পার্টি, ভুয়া এইচএস কোড, সীমান্ত চোরাচালানি, কেজি দরে আমদানির দিন শেষ করতে, এর সাথে জড়িত সব ধরনের ডিজিটাল অপরাধের বিস্তারে লাগাম টানা হবে। এখানে কোনো ছাড় নয়।”
তিনি আরও বলেন, “তবে হ্যাঁ, আমরা বিটিআরসিতে বসেছি। আমদানি শুল্ক কমাতে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং আমরা এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে দ্রুতই বসবো ইনশাল্লাহ। পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদকদেরকে বিটিআরসির পক্ষে মূল্য কমাতে মৌখিকভাবে অনুরোধও জানানো হয়েছে।”
অবশ্য গ্রাহকদের দিক বিবেচনা করে বৈধ মোবাইল ফোনের দাম কমাতে যা যা করা দরকার, তাই করবেন বলে আশ্বাস দেন বিশেষ সহকারী।
তিনি বলেন, “পাশাপাশি, আপনি নিয়ম মেনে বিদেশ থেকে ফোন আনবেন, সেটা নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সহজ করতে বিটিআরসি কাজ করছে। ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে যে, আপনার হাতে থাকা বর্তমান ফোন, ১৬ ডিসেম্বরের আগে অ্যাকটিভ ফোন সবগুলোই বৈধ হিসেবে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হবে। এটাও মনে রাখতে হবে, ভারত বা অন্যদেশে এভাবে গণহারে বিদেশি ফোন ঢুকে না। অবৈধভাবে আমদানি করে বা চোরাই ফোন এনে হাইএন্ড ফোনের দাম কমাতে হবে, এটা মানতে রেগুলেটর হিসেবে বিটিআরসি বাধ্য না।”
তিনি পরামর্শ দেন, “আপনার নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম যদি কাউকে, ক্লোন করা হয়নি, এমন ফোনে ব্যবহার করলে কখনই ঝামেলায় পড়বেন না। তাই সিম সব সময় নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন রাখুন। আপনার ব্যবহার করা সিমটা নিজের নামে থাকলে, রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি খুব সহজ।”
প্রবাসীদের উদ্দেশে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “প্রবাসীরা বাইরে থেকে নিয়ম মেনে একটি বা দুটি ফোন ফ্রি আনবেন, নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন করবেন। কোনো ঝামেলা হবে না। দুটির বেশি ফোনের ক্ষেত্রে এনবিআরের আলাদা নিয়ম রয়েছে, একটা ফি দিতে হয়, এটা পুরোনো নিয়ম।”
বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, “রেজিস্ট্রেশন, ডি-রেজিস্ট্রেশন এবং রি-রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতিসমূহ কীভাবে সাধারণ নাগরিকদের জন্য সহজ করা যায়, সে বিষয়ে আমরা আপনাদের যৌক্তিক পরামর্শ পেয়েছি এবং পাচ্ছি। এটা আমরা আমলে নিচ্ছি।”
