‘পানি জাহাঙ্গীর’-এর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচার মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮:৩৮, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
 
						সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম। ছবি: সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে ‘পানি জাহাঙ্গীর’-এর বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)।
শুক্রবার বিকেলে সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সংস্থার ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ পদে নিয়োগ পান। ওই পদ থেকেই তিনি অবৈধ আর্থিক সুবিধা গ্রহণের পথ খুলে ফেলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা শুরু করেন। তবে ব্যবসার আড়ালে চলত সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেন। কোম্পানির একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিশাল অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার কোনো বৈধ উৎস দেখাতে পারেননি তিনি।
২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৫৬৫ কোটি টাকার লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তদন্তে আরও উঠে আসে, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। ২০২৪ সালের জুনে তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ার এক আবাসিক এলাকায় বসবাস করছেন।
তবে তাদের বিদেশে বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন পাওয়া যায়নি। সিআইডির প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, তারা ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে অন্তত ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, সম্পৃক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের লক্ষ্যে তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সম্পত্তির দলিল ও বিদেশি লেনদেনের নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, “অর্থপাচার চক্রে জাহাঙ্গীরের সম্পৃক্ততা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মামলা দায়েরের পর তাকে দেশে ফেরাতে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।”

 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													 
													