তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল দাবিতে পঞ্চম দিনের শুনানি চলছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৪, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় দাখিল করা আপিলের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আজ পঞ্চম দিনের মতো শুনানি চলছে।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বুধবার সকাল থেকে এ শুনানি শুরু করেন।
আজ আদালতে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছেন ব্যারিস্টার মো. শাহরিয়ার।
২১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই শুনানিতে প্রথম দুদিন রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে শুনানি করেন ড. শরীফ ভূঁইয়া।
২৩ অক্টোবর তৃতীয় দিনের শুনানি শেষে গত ২৮ অক্টোবর জামায়াতের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতে বক্তব্য দেন।
এর আগে ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ, এবং পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করা হয় ২১ অক্টোবর।
শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি বলেন,“তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিয়ে সাময়িক সমাধান নয়, বরং নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কার্যকর ও স্থায়ী সমাধান খুঁজছে আপিল বিভাগ, যাতে গণতন্ত্র বারবার বিঘ্নিত না হয়।”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন— “তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরলে তা কখন থেকে কার্যকর হবে?”
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন,“দেড় দশকে জনগণ শাসিত নয়, বরং শোষিত হয়েছে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস হয়েছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে।”
তিনি ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের উদাহরণ টেনে বলেন, জনগণের এই ক্ষমতাকে উপেক্ষা করলে ‘বিপ্লবের জন্ম হয়’।
সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী ও রায়
১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে ত্রয়োদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়।
তবে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম. সলিম উল্লাহসহ তিন আইনজীবী এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন।
২০০৪ সালে হাইকোর্ট রিট খারিজ করে এ ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
পরবর্তীতে ২০০৫ সালে আপিল বিভাগে মামলা ওঠে। আটজন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) মত দেন—
যার মধ্যে ড. কামাল হোসেন, টিএইচ খান, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ছিলেন।
অন্যদিকে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এর বিপক্ষে মত দেন।
অবশেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেয়। এর ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩০ জুন সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়।
এরপর আওয়ামী লীগের অধীনে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দলের পতনের পর গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবি পুনরায় জোরদার হয়।
একই বছরের ২৭ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট নাগরিক প্রথম রিভিউ আবেদন করেন।
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও পৃথকভাবে আবেদন করেন।
ফলে মোট চারটি রিভিউ আবেদন একসঙ্গে শুনানিতে ওঠে, যার ধারাবাহিকতায় চলছে আজকের পঞ্চম দিনের আপিল শুনানি।
