কপ৩০-এ ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু উদ্যোগের আহ্বান বাংলাদেশের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯:৫০, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ বাংলাদেশ। ছবি: সমাজকাল
ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ৩০-এ ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় ন্যায়, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও বৈশ্বিক সংহতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশের ন্যাশনাল স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ভাঙনের মতো জলবায়ু দুর্যোগ এখন বাংলাদেশে প্রতিদিনের বাস্তবতা। এসব কারণে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, জীববৈচিত্র্য ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
“জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জন্য কোনো দূরবর্তী ধারণা নয়—এটি আমাদের প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা,” মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের জলবায়ু দুর্বলতার পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক দায়ও বহন করতে হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জলবায়ু, সংঘাত ও বাস্তুচ্যুতি—এই তিনটির সম্মিলিত চাপ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ওপর অতিরিক্ত বোঝা তৈরি করছে।
নাভিদ শফিউল্লাহ জানান, বৈশ্বিক নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান ০.৫ শতাংশেরও কম—তবুও দেশটি জলবায়ু কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছে। গ্লোবাল স্টকটেকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ এনডিসি ৩.০ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য গ্রহণ করেছে—যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি। পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা এবং স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন কার্যক্রমে বড় ধরনের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, পূর্বানুমানযোগ্য জলবায়ু অর্থায়ন ও সহজ প্রযুক্তি না মিললে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো টিকে থাকতে পারবে না। দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বল্প বাজেট থেকে ব্যাপক ব্যয় করতে গিয়ে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তাকেও হুমকিতে ফেলে।
বৈশ্বিক জলবায়ু কর্মযজ্ঞকে ত্বরান্বিত করতে তিনি চারটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন—
১) জলবায়ু ন্যায়বিচারভিত্তিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা এবং আইসিজের মতামতকে আন্তর্জাতিক জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপে রূপান্তর;
২) সরকারি অর্থায়ন জোরদার করা এবং অভিযোজন অর্থায়ন বছরে কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করা;
৩) অনুদানভিত্তিক অর্থায়ন বৃদ্ধি ও ক্ষয়ক্ষতি তহবিল দ্রুত কার্যকর করা;
৪) স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন ও প্রকৃতিনির্ভর সমাধানে বিনিয়োগ বাড়ানো, বিশেষত সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বন সংরক্ষণ, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক বন্যা ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায়।
তিনি বলেন, জলবায়ু উদ্যোগের রাজনীতিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দীর্ঘায়িত করেছে। তার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়—কপ৩০ হতে পারে হয় আরেকটি হারানো সুযোগ, অথবা বহু বছরের অক্রিয়তা ভেঙে নতুন দিশা তৈরির সূচনা।
বক্তব্যের শেষে তিনি আহ্বান জানান, “বেলেম থেকে যেন সাহসের বার্তা উঠে আসে—ন্যায়কে সামনে রেখে সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ পৃথিবী গড়ে তুলি।”
