টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষায় ১৯ নির্দেশনা বাধ্যতামূলক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:১৮, ১০ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:৫০, ১০ নভেম্বর ২০২৫
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের সভাপতিত্বে এবং কৃষি ও স্বারষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরের পরিবেশ রক্ষা ও জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষায় সরকার জারি করেছে কঠোর সুরক্ষা আদেশ। ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’-এর ক্ষমতাবলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। আদেশ অনুযায়ী, হাওর এলাকায় এখন থেকে ১৯টি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা বাধ্যতামূলক হবে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, টাঙ্গুয়ার হাওর ও হাকালুকি হাওর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন, অবৈধ বালু উত্তোলন, চায়না জাল ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ এবং বর্জ্য নিঃসরণের কারণে হাওরের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিতে হাওরের টেকসই সুরক্ষা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই আদেশ কার্যকর করা হয়েছে।
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওরে মানতে হবে ১৯ নির্দেশনা:
১. পাখি ও পরিযায়ী পাখি শিকার নিষিদ্ধ। হাওরের আশপাশে বাণিজ্যিক হাঁস পালন বা গাছ কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
২.. জলজ বন সংরক্ষণ। হিজল, করচসহ গাছের ডাল কেটে মাছ ধরার ঘের নির্মাণ বা কাঁটা হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ।
৩. সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশে বিধিনিষেধ। পর্যটক বা হাউসবোট কোনো অভয়ারণ্য, প্রজননকেন্দ্র বা সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না।
৪.ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ। সরকারের অনুমতি ছাড়া হাওরের ভূমির ব্যবহার বা শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না।
৫.জলস্রোতের স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা দেওয়া যাবে না।
৬.প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট করা যাবে না। ভূমি ও পানির গঠন পরিবর্তন নিষিদ্ধ।
৭.শিক্ষা সফর ও বিদেশি পর্যটনের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক।
৮. যাত্রীসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। অনুমোদনের সীমা অতিক্রম করে কোনো নৌযান চলাচল করতে পারবে না।
৯.দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটন নিষিদ্ধ। ঝড় বা বজ্রপাতের সময় যাত্রী চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
১০.স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি সম্মান। পর্যটক ও অপারেটরদের স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষায় সচেতন থাকতে হবে।
১১.নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা নিষিদ্ধ।
১২.. শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ। ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহারে উচ্চ শব্দ করা যাবে না।
১৩.. একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ।
১৪.. নিষিদ্ধ জাল বা বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মাছ ধরা যাবে না।
১৫. বালু ও পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ। অনুমতি ছাড়া কোনো প্রকার ইজারা বা উত্তোলন করা যাবে না।
১৬. শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিঃশেষ করা নিষিদ্ধ।
১৭.১০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ।
১৮.. বর্জ্য নিঃসরণে নিষেধাজ্ঞা। বসতবাড়ি বা শিল্পকারখানার বর্জ্য হাওরে ফেলা যাবে না।
১৯. পাকা সড়ক নির্মাণ সীমিত। একান্ত প্রয়োজন হলে পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়নের পর অনুমোদন নিতে হবে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব নির্দেশনা অমান্য করলে তা ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সরকারি অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ, নির্মাণ বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় আনা হবে।
