২০২৫: রেকর্ড গরমের শীর্ষ তিনে থাকবে বছরটি জাতিসংঘের সতর্কবার্তা
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:২০, ৭ নভেম্বর ২০২৫
জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএম)। ছবি: ইউএন টুডে
বিশ্বজুড়ে অস্বাভাবিক তাপমাত্রার ধারাবাহিকতার কারণে ২০২৫ সালটি হতে যাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ তিন বছরের একটি। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা (ডব্লিউএম)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২৫ সালটি হয় দ্বিতীয়, নয়তো তৃতীয় সর্বাধিক উষ্ণ বছর হিসেবে ইতিহাসে স্থান পাবে।
জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক গড় পৃষ্ঠতাপমাত্রা (মাটি থেকে প্রায় দুই মিটার ওপরে মাপা) শিল্প-পূর্ব সময়ের গড়ের চেয়ে ১.৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। অর্থাৎ, ২০১৫ থেকে ২০২৫— এই দশকটিই হবে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ দশক।
আরও একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো-
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরও — কার্বন ডাই–অক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্রীনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব নতুন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। যা ভবিষ্যতের জন্য আরও তাপ ‘লক ইন’ করে দিচ্ছে।
ব্রাজিলের বেলেম শহরে কপ ৩০ জলবায়ু সম্মেলনের ঠিক আগে আগেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, “১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থতা হবে মানবতার এক নৈতিক ব্যর্থতা।”
ডব্লিউএমওর মহাপরিচালক সেলেস্ট সাউলো জানান, “বর্তমান পরিস্থিতি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ, কিন্তু বিজ্ঞান বলছে— এখনো সময় আছে, এই শতাব্দীর শেষে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনা সম্ভব, যদি অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।”
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৫ সালের শীতকাল শেষে আর্টিক অঞ্চলের বরফের বিস্তার ছিল ইতিহাসে সর্বনিম্ন, আর দক্ষিণ মেরুতেও (অ্যান্টার্কটিকা) বরফের পরিমাণ ছিল গড়ের অনেক নিচে।
এমন পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী তীব্র তাপপ্রবাহ, ভয়াবহ বন্যা ও দাবানলের মতো চরম জলবায়ুজণিত ঘটনা আরও ঘনঘন ঘটাচ্ছে— যা মানুষের জীবন, খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবিকা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালের পর থেকে আগাম দুর্যোগ সতর্কতা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে ১১৯টি দেশ এ ধরনের ব্যবস্থা চালু করেছে— যা ২০১৫ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।
তবে এখনো বিশ্বের ৪০ শতাংশ দেশ এমন সতর্কতা ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত। প্রতিবেদনে তাই ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’-এর আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বেড়েছে ২.৩ শতাংশ। এর বড় অংশের দায় ভারতের পর চীন, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ওপর পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বৃদ্ধির ফলে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য— অর্থাৎ বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা— এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘের জলবায়ুবিজ্ঞানী ক্রিস হিউইট বলেন, “আমরা এখনো জানি না কত বছর ধরে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির ওপরে থাকবে— সেটা নির্ভর করছে আজকের সিদ্ধান্তের ওপর।”
তিনি আরও বলেন, কপ৩০ সম্মেলন হবে মানবজাতির জন্য এক বড় পরীক্ষা— আমরা এখনো সময়ের মধ্যে আছি, কিন্তু ঘড়ির কাঁটা দ্রুত ঘুরছে।
সূত্র: জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা
