৬ মাসেও শেষ হয়নি উপদেষ্টার সাবেক এপিএসের সম্পদ অর্জনের তদন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৬, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১২:১৭, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত ছয় মাস ধরে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। কিন্তু এ সময়েও তদন্তে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় অনুসন্ধান থমকে আছে।
মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে গত এপ্রিল মাসে । তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার, তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি-টেন্ডার বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদকের প্রাথমিক গোয়েন্দা অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের কিছু প্রমাণও পাওয়া যায়। এরপর সংস্থাটি মে মাস থেকে নিয়মিত অনুসন্ধান শুরু করে।
দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তথ্য-উপাত্ত চেয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হলেও সংশ্লিষ্ট অনেক দপ্তর এখনো কোনো তথ্য দেয়নি। এ কারণে অনুসন্ধান কার্যক্রম সামনে এগোচ্ছে না।
দুদকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযোগটি গুরুত্ব দিয়েই অনুসন্ধান হচ্ছে। কিন্তু যে অভিযোগগুলো এসেছে, এর স্বপক্ষে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যমূলক ভিত্তি ছাড়া তদন্ত এগোয় না। তারপরও চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
গত ২১ এপ্রিল স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার এপিএস পদ থেকে মোয়াজ্জেম হোসেনকে অব্যাহতি দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপরই দুদক তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। এই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদকের সহকারী পরিচালক আসিফ আল মাহমুদ এবং উপসহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমির সমন্বয়ে একটি টিম কাজ করছে।
অসহযোগিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নিজেই দুদককে তদন্ত করার অনুরোধ করেছিলেন। গত ২৪ মে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘যে–ই দুর্নীতিতে জড়াক, রাষ্ট্রীয় আইনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও পেশাদারত্বই নতুন বাংলাদেশের প্রমাণ।’
দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ মে মোয়াজ্জেম হোসেনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও এনআইডি ব্লক করার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব। দুদকের আবেদনে এ আদেশ দেওয়া হয়।
২২ মে দুদকে হাজির হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন মোয়াজ্জেম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ “ভিত্তিহীন” এবং “রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত”। তিনি দাবি করেন, ছাত্র রাজনীতিকে লক্ষ্য করে একটি গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
মোয়াজ্জেম আরও জানান, তিনি দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার আগেই বিসিএস ভাইভার প্রস্তুতির জন্য ২৫ মার্চ পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য. ‘পদত্যাগের পর আমার নামে প্রচার হওয়া অভিযোগগুলো এসেছে।’
এত দীর্ঘ সময়েও অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কেউই মন্তব্য করতে চাননি।
তবে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে, তা তদন্ত টিমের সঙ্গে কথা বলে জানানো হবে।’
