রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদন
নয়া দিল্লির মডেল ‘ভার্মার’ ছবিতে ‘মোনামির’ মুখ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬:১৯, ৩ নভেম্বর ২০২৫
						রিউমার স্ক্যানার ফ্যাক্ট চেক। ছবি: সমাজকাল
ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আনিম ভূইয়া মোনামির একটি ছবি নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। গত কয়েকদিন ধরেই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। ওই আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে দিয়ে কুরুচিপূর্ণ, আশালীন ও মানহানিকর মন্তব্যও করছেন কেউ কেউ।
ছবিটি তার নয় বলে দাবি করেছেন ওই শিক্ষক। ছবি বিকৃত করায় সাইবার সুরক্ষা আইনে সোমবার (৩ নভেম্বর) তিনি শাহবাগ থানায় মামলাও করেছেন। মামলায় আসামীদের মধ্যে চারজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
শেহরীন আনিম ভূইয়া মোনামি বলেছেন, ক্রমাগতভাবে আমার ছবি এডিট করে আশালীনভাবে পোস্ট করা এবং আমাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, আশালীন ও মানহানিকর মন্তব্য করার ফলে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এ বিষয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হলো।
আসলেই কি ঢাবির এই শিক্ষককের ছবি বিকৃত করা হয়েছে, আর করা হলেও কার ছবি সম্পাদনা করে বিকৃত করা হয়েছে- এসব জানতে উদগ্রিব সাধারণ মানুষ।
এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার বাংলাদেশ। সোমবার (৩ নভেম্বর) তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি শতভাগ সম্পাদিত।
জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচন চলাকালীন আলোচনায় আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)। সেসময় তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে জড়িয়ে বিভিন্ন অপপ্রচারও চালানো হয়। সম্প্রতি, তার ছবি দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
এই ছবির ব্যাপারে ‘রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ’ সোমবার তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ঢাবি শিক্ষিকা শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো তার নয়। প্রকৃতপক্ষে, সাইমা ভার্মা নামের ভারতীয় একজন মডেলের ছবিকে এআই প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করে চেহারার কিছুটা পরিবর্তন এনে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
আলোচিত ছবিগুলোর বিষয়ে অনুসন্ধানে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে Syma Verma নামের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ২ সেপ্টেম্বর প্রচারিত একটি ফটো অ্যালবাম খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ফটো অ্যালবামটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ফটো অ্যালবামের দুটো ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর মিল রয়েছে।
রিউমার স্ক্যানার আরও জানায়, উভয় ছবিগুলোতেই একই নারীকে একই স্থানে একই পোশাকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তবে ছবিগুলো সূক্ষ্মভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রাপ্ত ছবিগুলোর সাথে শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর নারীর চেহারার সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। যেহেতু প্রাপ্ত ছবিগুলো একই নারীর এবং উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রচারিত অন্যান্য ছবিগুলোর সাথে এই নারীর চেহারার মিল রয়েছে। তাই এটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে যে, উক্ত ফটো অ্যালবামের আলোচিত ছবিগুলোর এআই প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনার মাধ্যমে চেহারার কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রাপ্ত ফটো অ্যালবাম থেকে জানা যায়, ছবিগুলো ভারতের গুরুগ্রাম এলাকায় তোলা হয়েছে। পাশাপাশি উক্ত ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি পর্যালোচনার মাধ্যমে জানা যায়, ছবির নারীর নাম সাইমা ভার্মা। তিনি ভারতের নয়া দিল্লির একজন বাসিন্দা এবং পেশায় একজন মডেল।
পরবর্তীতে শেহরীন আমিন ভূঁইয়ার ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির সহায়তায় সম্পাদনা করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এআই কনটেন্ট শনাক্তকারী প্ল্যাটফর্ম Deepfake-O-Meter এ ছবিটি পরীক্ষা করলে দেখা যায়, ছবিগুলো এআই দিয়ে সম্পাদনা হওয়ার সম্ভাবনা ৭৭.৫৫ ও ১০০ শতাংশ।
সুতরাং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিটি সম্পাদিত বলে নিশ্চিত করে রিউমার স্ক্যানার।
 
