আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যুবদলের কিবরিয়া হত্যা: র্যাব
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:০৪, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৫৭, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরে রাজধানীর পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে (৫০) হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)। হত্যা মামলাটিতে দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ওই ঘটনার মোটিভ উদঘাটনেরও দাবি সংস্থাটির।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল (৩০) ও মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজন (৩৫)। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাতে সাভার থানার বিরুলিয়া থেকে পাতা সোহেল এবং টঙ্গী পশ্চিম থানার মাজার বস্তি এলাকা থেকে সুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব বলছে, পল্লবীর হত্যাটি সুপরিকল্পিত এবং বড় অংকের অর্থের লেনদেনে ঘটেছে। আসামিরা পেশাদার খুনি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া পাতা সোহেলের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ পল্লবী থানায় মোট আটটি মামলা রয়েছে। আর বুকপোড়া সুজন ১৮ মামলার পলাতক আসামি। তারা দুজনই মিরপুরকেন্দ্রিক ‘ফোর স্টার গ্রুপ’র সক্রিয় সদস্য।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পল্লবীর বিক্রমপুর স্যানিটারি ও হার্ডওয়্যার দোকানে প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে বুকে ও পিঠে অতর্কিত গুলি করে থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করেন ছয়জন সন্ত্রাসী। ঘটনাস্থল থেকে পালানোর সময়ও স্থানীয় জনতার ওপর গুলি করেন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা। এতে এক রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে ছাত্র-জনতা ধাওয়া করে সন্ত্রাসী জনি ভূইয়াকে আটকে পল্লবী থানা পুলিশে সোর্পদ করে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম জানান, ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে গিয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং আনুষঙ্গিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করেন তারা। এরপর ঘটনার রহস্য উদঘাটন এবং জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তবে তিনি কীভাবে অর্থ পেয়েছেন কিংবা কার কাছ থেকে পেয়েছেন, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়।
হত্যার মোটিভ সম্পর্কে প্রশ্নে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, প্রথমত, মিরপুর এলাকাকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কোন্দল। নিহত গোলাম কিবরিয়া একটি রাজনৈতিক দলের সদস্য সচিব এবং মিরপুর এলাকায় রাজনৈতিকভাবে তিনি খুব সক্রিয় ছিলেন। এর আগে গোলাম কিবরিয়ার যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল, রাজনৈতিক মেরুকরণের পরে তাদের বিরুদ্ধে তিনি কাজ করছিলেন। বিশেষ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারিতে গোলাম কিবরিয়ার সাপোর্ট ছিল না। হয়তো এ কারণে হত্যার ঘটনাটি ঘটতে পারে।
গ্রেপ্তার হওয়া দুজন মিরপুরকেন্দ্রিক ফোর স্টার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। গ্রুপটি সম্পর্কে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইব্রাহিম ও মামুন নিয়ন্ত্রিত যেসব এলাকা রয়েছে, সেসব এলাকায় এই ফোর স্টার গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত।
হত্যায় মামুনের সম্পৃক্ততা আছে কী না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামুনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। হত্যায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন থাকতে পারে। সবাইকে গ্রেপ্তার করা গেলে পুরো রহস্য উন্মোচিত হবে।
