‘ভারতকে হারিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করেছি’—জয়ের পর হামজা চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২২, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ০৮:৫২, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
ভারতকে হারানোর ঐতিহাসিক মুহূর্তের পর পুরো দেশ যখন উচ্ছ্বাসে মেতেছে, তখন সেই আনন্দের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন হামজা চৌধুরী। শেখ মোরসালিনের গোলে বাংলাদেশ ২২ বছর পর ভারতকে হারালেও মাঠের সেরা লড়াকু পারফরম্যান্স দেখানো খেলোয়াড় ছিলেন হামজাই। রক্ষণ, মাঝমাঠ ও আক্রমণ—তিন জায়গাতেই অসাধারণ দক্ষতায় খেলে দলের জয় ধরে রাখায় বড় ভূমিকা রেখেছেন ইংলিশ লিগে খেলা এই ফুটবলার।
ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা সঙ্গে নিয়ে আসেন হামজাকে। বড় হাসিমুখ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে বসে হামজা প্রথমেই নিজের আবেগ প্রকাশ করেন—
‘ভারতকে হারিয়ে ১৮ কোটি মানুষকে খুশি করতে পেরেছি। পৃথিবীর আর কোথাও এটা হয়তো সম্ভব নয়। তাই এটি আমার ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের একটি।’
দুই যুগ পর জয়ের আনন্দ
হামজা বলেন, ‘মানুষ খুশি—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ২০০৩ সালের পর এতদিন অপেক্ষা করে অবশেষে জয় এসেছে। এশিয়ান কাপ বাছাই থেকে ছিটকে যাওয়ার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আগের ম্যাচগুলোর মতো শেষদিকে ভুল করিনি। আমরা বিশ্বাস করেছিলাম—একসঙ্গে থাকলে সামলাতে পারব। খেলোয়াড়, স্টাফ—সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছে। এরই পুরস্কার এই জয়।’
বাংলায় হামজার প্রতিক্রিয়া
‘আপনি কেমন অনুভব করছেন?’—প্রশ্নের জবাবে বাংলাতেই বললেন হামজা—‘খুব ভালো লাগছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরা জিতেছি। ক্যাম্পে আমি শেষে যোগ দিলেও কোচ-স্টাফরা ২৩ দিন ধরে ৫০০ ঘণ্টারও বেশি পরিশ্রম করেছেন। আজ তার ফল পেলাম।’
দলে দেরিতে যোগ—তবু মানসিকতা বদলে দিয়েছেন
হামজা বলেন, ‘আমি আর শামিত একটু দেরিতে যোগ দিয়েছি। এসে শুধু মানসিকতা বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। শেষ চার ম্যাচে আমরা ট্যাকটিক্যালি ভালো ছিলাম, কিন্তু শেষদিকে ভুল করতাম। আজ সেটা হয়নি। হয়তো বল পায়ে খুব দারুণ ছিলাম না, কিন্তু স্থিতিশীল ছিলাম।’
এশিয়ান কাপে লাভ না হলেও মন খারাপ নেই
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে আগেই বিদায় নিশ্চিত হওয়ায় এই জয়ের কোনো প্রভাব না পড়লেও হামজা বলেন,
‘আমরা জিতেছি—এই আনন্দটাই বড়।’
আগামী লক্ষ্য—সিঙ্গাপুর ম্যাচ এবং বড় টুর্নামেন্ট
মার্চে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন—
‘এটাও এক ধরনের ফাইনাল ছিল। ২২ বছর পর এমন জয় এসেছে। এখন নতুন করে প্রস্তুতি নেব। পারফরম্যান্স আর ফল—দুটো একসঙ্গে আনতে হবে।’
স্বপ্নপূরণের প্রসঙ্গে হামজা বলেন—‘অবশ্যই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সামনে আরও বড় স্বপ্ন আছে—খুব দ্রুতই আমরা বড় কোনো টুর্নামেন্টে কোয়ালিফাই করব ইনশাআল্লাহ। আমাদের দলে অনেক তরুণ খেলোয়াড় আছে—জায়ান, মিঠু—চাপ সামলে দুর্দান্ত খেলেছে।’
বাংলাদেশের ফুটবলের এই ঐতিহাসিক রাতে হামজার অবদানই এখন দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু—তার পারফরম্যান্স, তার মানসিকতা এবং তার বিশ্বাস নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীদের।
