৫ ইসলামি ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সরকার কিছুটা নমনীয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৯, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি ব্যাংকের শেয়ারমূল্য শূন্য ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এসব ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে। তবে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিবেচনায় সরকার কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিয়েছে, কারণ সম্পূর্ণ শূন্য ঘোষণা দিলে বহু বিনিয়োগকারী বিপাকে পড়বেন এবং শেয়ারবাজারের সার্বিক পরিস্থিতিও আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে নমনীয়তা দেখানো হলেও এই পাঁচ ব্যাংককে সংকটে ফেলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ ব্যাংককে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, একীভূতকরণের আওতাধীন পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটির মূল্য শূন্যের নিচে নেমে গেছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় না। একই দিনে পাঁচ ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ এবং প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রশাসকরা প্রথম ধাপে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের ‘আমানত সুরক্ষা তহবিল’ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলনের সুযোগ দেবেন। পুরো একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এর প্রতিবাদে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ অর্থ উপদেষ্টা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবি করেছে। সংগঠনটি ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটামও দিয়েছে। পরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, গভর্নরের বক্তব্য চূড়ান্ত নয়; শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, আইনানুগভাবে ব্যাংকের ঘোষণা যথাযথ হলেও রাষ্ট্র বড় স্বার্থে কখনও কখনও আইন ছাড়িয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিপূরণের সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঁচ ব্যাংকের দুরবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে, মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, কর্মকর্তা ও খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ, বিনিয়োগ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই পাঁচ ব্যাংক হলো—ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
নতুন একীভূত ব্যাংক ‘সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংক’ নামে গঠন করা হবে। নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার এবং আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার আমানত শেয়ারে রূপান্তর করা হবে।
