ফিফার নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত বাংলাদেশি ক্লাব ফুটবল
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:৫৩, ৫ নভেম্বর ২০২৫
বসুন্ধরা কিংস ও মোহামেডান। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফুটবলে উদ্ভূত এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে—একসঙ্গে এত বেশি ক্লাব ফিফার নিষেধাজ্ঞার মুখে আগে কখনও পড়েনি। চলমান মৌসুমে মোট ১১টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে অন্তত সাতটি ক্লাব এখন ফিফার শাস্তির তালিকায় রয়েছে। ফুটবলার ও কোচদের পাওনা বকেয়া পরিশোধ না করায় এই শাস্তি এসেছে।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগের মুখে রয়েছে বসুন্ধরা কিংস—মোট ৫টি অভিযোগ। এরপর শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের তিনটি, আর মোহামেডান, আবাহনী ও ফেনী সকার ক্লাবের একটি করে মামলা ফিফার টেবিলে। গত সপ্তাহেই মোহামেডানের ওপর ফিফা শাস্তির খড়গ নেমেছিল, এবার সেই তালিকায় যোগ হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীও।
ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, খেলোয়াড় বা কোচের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ না করা পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে। আগে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলও একই কারণে নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিল, তবে বকেয়া মেটানোর পর তাদের ওপর থেকে শাস্তি উঠে যায়।
মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর সম্প্রতি বলেছেন,“আমাদের আগের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সময়মতো যোগাযোগ রাখতে পারেননি। এখন বকেয়া অর্থ প্রদান করলে ক্লাবের ওপর থেকে ফিফার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।”
ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৪ সালের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ক্লাব পরিচালনায় বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক ক্লাবের পুরনো প্রশাসন সরে যাওয়ায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে বিদেশি কোচ ও খেলোয়াড়দের বেতন বন্ধ হয়ে যায়, তারা সরাসরি ফিফায় অভিযোগ করেন।
ইয়ংমেন্সের কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন,“আগে যারা ক্লাব চালাতো তারা আর নেই। তাদের ভুলের কারণেই সমস্যা হয়েছিল। আমরা নতুনভাবে এসে তা সমাধান করেছি।”
দেশের সবচেয়ে সংগঠিত ও করপোরেট কাঠামোর ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের ওপরই এসেছে সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞা। ক্লাব সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“দেশের পরিবর্তিত অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতিতে ক্লাবগুলোর আয় অনেক কমে গেছে। ডোনেশনের ওপর নির্ভরশীল ক্লাবগুলো যেমন সমস্যায়, তেমনি করপোরেট ক্লাবগুলোরও এখন বেতন-ভাতা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও যোগ করেন,“বিদেশি খেলোয়াড় ও কোচদের নিয়মিত পরিশোধ করা যাচ্ছে না, তাই তারা ফিফায় যাচ্ছেন। তবে নির্বাচনের পর স্থিতিশীলতা ফিরলে সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের এক সাবেক কর্মকর্তা বলেন,“ফিফার নিষেধাজ্ঞা কেবল শাস্তি নয়, এটি সতর্কবার্তা। ক্লাব পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব আনা না গেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ফুটবলের ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
