মসজিদে হারামে নিরাপত্তাকর্মীর অসদাচরণ, নেটিজেনদের সমালোচনা
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:২৮, ৫ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২২:০১, ৫ নভেম্বর ২০২৫
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, মসজিদে হারামে এক ওমরাহ পালনকারীর সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মী খারাপ আচরণ করছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তাকর্মী তাকে থাপ্পড় মারছেন এবং জোরে ধাক্কা দিচ্ছেন, ফলে তিনি ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছেন, এরকম কয়েকবার হয়।
অন্য একটি ভিডিওতে একজন নারী মুসল্লিকেও একই ধরনের আচরণের শিকার হতে দেখা যায়।
এসব ঘটনার পর সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সমালোচনার ঝড় ওঠে, যা হারামাইন কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

অতঃপর হারামাইনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন'-এ তিনটি ছবি আপলোড দেওয়া হয়। ছবি তিনটিতে দেখা যায়, মসজিদে হারামের নিরাপত্তাকর্মীরা মুসল্লিদের সঙ্গে অত্যন্ত সম্মানসূচক আচরণ করছেন।

সেই পোস্টে লেখা হয়, ‘দুই পবিত্র মসজিদের নিরাপত্তাকর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে, তাদের হৃদয় পূর্ণ থাকে ভক্তিতে, পরম করুণাময়ের অতিথিদের সেবা করার আগ্রহে তারা সদা উদ্দীপ্ত। অটল নিষ্ঠা নিয়ে তারা পবিত্র প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে। আল্লাহর ঘর এবং এতে আগত অতিথিদের সেবায় তারা প্রকৃত ভক্তি ও সেবার চেতনা ধারণ করে।’

পোস্টে হাদিয়া হাসনাইন মন্তব্য করেন, ‘দুর্ব্যবহারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর এখন নম্র ব্যবহারের ছবি দেখানো হচ্ছে। উভয়টিই সত্য।’
সাইয়্যেদ কাশিফ হুসাইন মন্তব্য করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি একমত। কিন্তু সত্য বলতে, কিছু নিরাপত্তাকর্মীর মধ্যে প্রবীণ হাজি ও নারীদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে নৈতিকতা ও সম্মানের ঘাটতি দেখা যায়। তারা কীভাবে নারীদের বা বৃদ্ধ হাজিদের টেনে বা ধাক্কা দিতে পারে? আমি বুঝি, সারা পৃথিবী থেকে আসা লাখো মানুষের ভিড় সামলানো সহজ কাজ নয়। তবে এটাও বুঝতে হবে, এসব হাজিরা ভিসা, টিকিট, হোটেলসহ নানা খরচে হাজার হাজার ডলার ব্যয় করে মক্কায় আসেন এবং পবিত্র মসজিদে হারামে সময় কাটাতে চান। তাদের ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা যেতে পারে নম্রতা ও ভদ্র আচরণের মাধ্যমে।’
উবায়েদ সাফি মন্তব্য করেন, ‘দেখা গেছে, হারামাইনের কিছু নিরাপত্তা সদস্য এমন আচরণে লিপ্ত হচ্ছেন, যা নারী হাজিদের জন্য অসম্মানজনক ও কঠোর বলে মনে হয়েছে। বিপুল ভিড় ও সংবেদনশীল পরিবেশে শৃঙ্খলা রক্ষা করা যেমন জরুরি, তেমনি প্রত্যেক হাজিরই মর্যাদা, ধৈর্য ও সহানুভূতির আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। চিৎকার করা, রূঢ় ব্যবহার বা অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণের মতো ঘটনাগুলো পবিত্র স্থানগুলোর আধ্যাত্মিক পরিবেশকে ক্ষুণ্ণ করে এবং মুসল্লিদের মনে অস্বস্তি তৈরি করে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ হারামাইন শরিফাইনে আসে শান্তি, আধ্যাত্মিকতা ও সম্মান পাওয়ার আশায়, অবমাননা বা কঠোর আচরণের মুখোমুখি হতে নয়। এই পবিত্র স্থানগুলো মানুষের আত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের কেন্দ্র। হাজিদের প্রতি আচরণ সেই পবিত্র উদ্দেশ্যের প্রতিফলন হওয়া উচিত। সশ্রদ্ধ অনুরোধ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন নিরাপত্তা সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত দিকনির্দেশনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, যাতে তাদের আচরণ বিশেষত নারী হাজিদের সঙ্গে সদাচরণ, সংস্কৃতিসচেতন ও হারামাইনের মূল মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। আরও সহানুভূতিশীল আচরণ হাজিদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করবে এবং এই পবিত্র স্থানগুলোর মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখবে।
ইউত সানা মন্তব্য করেন, ‘দুই পবিত্র মসজিদের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক বরাবর বিনীত অনুরোধ, অনুগ্রহ করে ভিডিওতে দেখা কর্মকর্তাদেরকে অতিথি সেবার শিষ্টাচার বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন। আর নয়তো তাদেরকে মুসল্লিদের সংস্পর্শ থেকে দূরে সরিয়ে সীমান্ত এলাকায় দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত করুন।
উসামা আবদি নাসির মন্তব্য করেন, ‘দুই পবিত্র মসজিদের নিরাপত্তাকর্মীরা সর্বদা প্রস্তুত থাকে, ভক্তি ও দায়িত্ববোধে পূর্ণ হৃদয়ে সেবা করে। তবে তাদের আরও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে তারা এই পবিত্র স্থানগুলোতে আগত দর্শনার্থীদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে শেখে। সম্প্রতি আমি এমন এক ঘটনা দেখেছি, যেখানে এক কর্মকর্তা অপেশাদার আচরণ করেছেন, একজন নারীকে অনুচিতভাবে স্পর্শ করেছেন এবং এমন ব্যবহার করেছেন, যা অত্যন্ত অস্বস্তিকর ও সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দিন।
মীর মুসাদ্দিক মন্তব্য করেন, ‘ওমরাহ ও হজের সময়ে নিরলস সেবার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, পুলিশ সদস্যদের যেন উৎসাহিত করা হয় হাজিদের প্রতি আরও কোমলতা ও ধৈর্যের সঙ্গে আচরণ করতে। এই হাজিরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসেন, জীবনের সঞ্চয় ব্যয় করে এবং দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, একমাত্র আল্লাহর পবিত্র ঘরে তার ইবাদত করতে। তাদের অনেকেই প্রবীণ, ক্লান্ত ও আবেগে আপ্লুত, তবুও এই পবিত্র স্থানের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় পূর্ণ। একজন পুলিশ কর্মকর্তার মধুর কথা বা ভদ্র আচরণ হাজিদের হৃদয় গভীরভাবে ছুঁয়ে যেতে পারে, তাদের পবিত্র যাত্রাকে আরও শান্তিময় ও স্মরণীয় করে তুলতে পারে। আল্লাহর অতিথিদের সেবা করা বিশাল সম্মানের ব্যাপার, আর আপনারা যখন তা সহানুভূতির সঙ্গে করেন, তখন প্রতিটি হাজির আত্মায় অমলিন ছাপ রেখে যায়।’
ডিএমসি নেয়ামত মন্তব্য করেন, ‘আপনাদের অবশ্যই নিরাপত্তারক্ষীদেরকে শিক্ষা দিতে হবে, যেন তারা বয়োজ্যেষ্ঠ ও নারীদের সঙ্গে ভদ্র ও নম্র আচরণ করে। ইসলাম আমাদের এ শিক্ষাই দেয়।’
সর্বোপরি, ভিড় ও কঠিন পরিবেশ সত্ত্বেও নিরাপত্তাকর্মীদের আচরণকে আরও মানবিক ও সংবেদনশীল করার প্রয়োজন রয়েছে। মুসল্লিরা পবিত্র স্থানগুলোতে শান্তি, ভক্তি ও মর্যাদার সঙ্গে ইবাদত করতে আসেন। তাই যেকোনো নেতিবাচক আচরণ মুহূর্তেই সমালোচনার জন্ম দেয়। একই সঙ্গে, নিরাপত্তা বাহিনীর সৌজন্যপূর্ণ এবং পেশাদার আচরণ মুসল্লিদের অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে এবং হারামাইনের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখে।
