সফল মানুষের ৮ অভ্যাস
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২০:৪৮, ৭ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫২, ৭ অক্টোবর ২০২৫
আমাদের সমাজে এখন শর্টকাটের কদর বেড়েছে। রাতারাতি খ্যাতি, দ্রুত সাফল্য কিংবা সহজ কোনো কৌশলে জীবন পাল্টে ফেলার স্বপ্ন অনেকেই লালন করে। অথচ বাস্তবতা হলো, যারা সত্যিকার অর্থে দীর্ঘ মেয়াদে জিতে যায়, যাদের জীবন স্থায়ী সফলতা ও প্রশান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে, তাদের সবার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে, তা হলো নিয়মানুবর্তিতা।
নিয়মানুবর্তিতা মানে কঠোরতা নয়। বরং এটি এক ধরনের জীবনযাপন, যেখানে থাকে গঠন, স্বচ্ছতা ও উদ্দেশ্যের প্রতি অঙ্গীকার। নিয়মানুবর্তিতা বা শৃঙ্খলা মানুষকে সেই কাজ করতে শেখায়, যা জরুরি, এমনকি তখনও যখন মন চাইছে না। সময়ের পরিক্রমায় এ অভ্যাসই হয়ে ওঠে সফলতার আসল চাবিকাঠি।
নিয়মানুবর্তী মানুষের এমন আটটি অভ্যাস আছে, যা তাদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেয়। সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
এক. সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা : মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা ক্ষণস্থায়ী। শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ জানে এটি আবহাওয়ার মতোই পরিবর্তনশীল। তাই তারা নির্ভর করে না ক্ষণিকের উচ্ছ্বাসের ওপর। বরং তারা নিজের জন্য তৈরি করে নেয় সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনা। যেমন দৈনিক রুটিন, নির্দিষ্ট পরিবেশ এবং দৃঢ় অঙ্গীকার। এতে কাজ হয়ে যায় প্রায় স্বয়ংক্রিয়।
দুই. লেগে থাকা : অধিকাংশ মানুষ একই কাজ বারবার করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়। কিন্তু শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ জানে, সাফল্য আসে ছোট ছোট পুনরাবৃত্তি থেকে। লেখক প্রতিদিন লিখে, তবেই নিজের ভঙ্গি খুঁজে পান, দৌড়বিদ বছরের পর বছর ভোরে উঠে, তবেই গতি অর্জন করেন। একঘেয়ে মনে হলেও এ অনুশীলনই টিকে থাকার শক্তি তৈরি করে।
তিন. কাজকে দার্শনিক ভিত্তির সঙ্গে মিলানো : নিয়মানুবর্তিতা অন্ধ আনুগত্য নয়। বরং এটি স্পষ্ট দর্শনের ফল। শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ জানে কেন তারা কিছু করছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ বৃহত্তর উদ্দেশ্যের সঙ্গে যুক্ত। এ কারণেই তাদের কর্মপ্রচেষ্টা কৃত্রিম মনে হয় না, বরং হয়ে ওঠে একধরনের নিবেদন।
চার. নিয়ন্ত্রণের সীমা বোঝা : যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তাতে শক্তি নষ্ট করে না শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ। তারা নিজের মনোযোগ দেয় প্রচেষ্টা ও ধারাবাহিকতায়, ফলাফলের প্রতি নয়। এভাবে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে তারা কাজের আনন্দ পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ফলও পায়।
পাঁচ. বেশি ‘না’ বলা : নিয়মানুবর্তিতা শুধু করাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং কী না করা হবে, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অযথা মেলামেশা, গসিপ, তুচ্ছ ব্যস্ততা বা নিম্নমানের কাজে সময় নষ্ট তারা এড়িয়ে চলে। কারণ তাদের কাছে মনোযোগ পবিত্র সম্পদ।
ছয়. ধারাবাহিকতায় আত্মসম্মান খুঁজে পাওয়া : প্রতিবার কেউ নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে আত্মসম্মান বেড়ে যায়। আবার তা ভঙ্গ করলে কমে যায়। শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ এ সম্পর্কটি বোঝে। তাই তারা আত্মশৃঙ্খলাকে আত্মসম্মানের একটি রূপ হিসেবে গ্রহণ করে। এর ফলেই আত্মবিশ্বাস নীরবে বেড়ে ওঠে।
সাত. পরিশ্রমের সঙ্গে বিশ্রামের ভারসাম্য রাখা : নিয়মানুবর্তিতা মানে নিরবচ্ছিন্ন খাটুনি নয়। বরং সঠিক ছন্দে কাজ ও বিশ্রামের সমন্বয়। যারা দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য পান, তারা জানেন, টিকে থাকতে হলে পুনরুজ্জীবন জরুরি। এজন্য তারা হাঁটে, ধ্যান করে, নির্জনতায় সময় কাটায়। এটি তাদের নতুন রাউন্ডের জন্য প্রস্তুত রাখে।
আট. দীর্ঘমেয়াদি কাজে মনোযোগী হওয়া : শৃঙ্খলাবদ্ধ মানুষ সময়কে ভিন্নভাবে দেখে। তারা দ্রুত জয় নয়, দীর্ঘস্থায়ী অর্জনের দিকে নজর দেয়। ব্যবসা, দক্ষতা, সম্পর্ক কিংবা সুনাম, সবকিছু গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে। তাই তারা সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়ে না, বরং ধৈর্য ধরে এগিয়ে যায়।
শৃঙ্খলা কোনো জোরজবরদস্তির ব্যাপার নয়। এটি এমন এক রূপান্তর, যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই জরুরি কাজকে বেছে নেয়। সাফল্যের প্রকৃত পথ নাটকীয় নয়, বরং শান্ত ধারাবাহিকতায় নিহিত।
