বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

অক্সিজেন : প্রাণের মৌল ও তার ইতিহাস

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৩:৩৭, ১ আগস্ট ২০২৫

অক্সিজেন : প্রাণের মৌল ও তার ইতিহাস

সমাজকাল ডেস্ক জীবনের জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য যে মৌলটির নাম প্রথমেই উঠে আসে, তা হলো অক্সিজেন—রাসায়নিক প্রতীকে ‘O’ এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৮। এই বর্ণহীন, গন্ধহীন গ্যাসটি কেবলমাত্র মানবদেহেই নয়, সমগ্র জীবজগতের শ্বাস-প্রক্রিয়ার জন্য একমাত্র ভরসা। কীভাবে চিনবেন অক্সিজেন? গ্যাস অবস্থায় অক্সিজেন বর্ণহীন, আর তরল অবস্থায় হালকা নীল। এর গলনাঙ্ক প্রায় -২১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং স্ফুটনাঙ্ক -১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি পি-ব্লকের একটি অধাতু মৌল এবং সাধারণত −২ বা +২ জারণ অবস্থায় থাকে। যোজ্যতা প্রধানত ২। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় ২১ শতাংশ। অক্সিজেন কোথা থেকে আসে? সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ সূর্যালোক, কার্বন ডাই অক্সাইড ও পানি থেকে গ্লুকোজ তৈরি করে এবং তার উপজাত হিসেবে নিঃসরণ করে অক্সিজেন। এভাবে উদ্ভিদ ও বৃক্ষই পৃথিবীতে অক্সিজেনের প্রধান উৎপাদক। ইতিহাসের পাতা থেকে অক্সিজেনের আবিষ্কার ছিল বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। ১৭৭৪ সালের ১ আগস্ট ইংরেজ রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্ট্‌লে সূর্যালোকের সাহায্যে পারদের অক্সাইড উত্তপ্ত করে যে গ্যাসটি উৎপন্ন করেছিলেন, সেটিই ছিল অক্সিজেন। তবে তিনি তখন একে “ডিফ্লোজিস্টিকেটেড এয়ার” নামে উল্লেখ করেছিলেন, কারণ সেই সময় প্রচলিত ছিল ‘ফ্লোজিস্টন তত্ত্ব’। অবশ্য প্রিস্ট্‌লেকে এই গ্যাসের প্রকৃত স্বরূপ ও গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করেছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী অঁতোয়ান ল্যাভয়সিয়ে। তিনিই অক্সিজেন শব্দটির প্রবর্তন করেন, যার অর্থ ‘অম্ল-উৎপাদক’। যদিও পরে জানা যায়, সব অম্লেই অক্সিজেন নেই। অক্সিজেন আবিষ্কারের পিছনে আরও দুটি নামের অবদান গুরুত্বপূর্ণ—কার্ল উইলহেল্ম শিলে এবং পি. বায়েন। শিলে ১৭৭২ সালেই অক্সিজেন প্রস্তুত করেছিলেন, কিন্তু তার গবেষণাপত্র দেরিতে প্রকাশ হওয়ায় তিনি প্রথম দাবিদার হতে পারেননি। অপরদিকে, বায়েন তার পরীক্ষায় দেখিয়েছিলেন ধাতু জ্বললে ওজন বাড়ে, কারণ তা বাতাসের কোনো উপাদান গ্রহণ করে—যা পরে প্রমাণিত হয় অক্সিজেনই ছিল। অক্সিজেনের ব্যবহার ও গুরুত্ব মানবদেহ ও প্রাণীর শ্বাসপ্রক্রিয়ার অপরিহার্য অংশ চিকিৎসায় অক্সিজেন সাপ্লাই জীবনরক্ষাকারী জ্বালানির দহনে সহায়ক জল (H₂O), বালি (SiO₂) এবং লৌহজ অক্সাইড (Fe₂O₃)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ যৌগ তৈরিতে অপরিহার্য বিশেষ বৈশিষ্ট্য তরল অক্সিজেন প্যারাম্যাগনেটিক, অর্থাৎ চৌম্বকক্ষেত্রে আকৃষ্ট হয় উচ্চ চাপ ও নিম্ন তাপমাত্রায় অক্সিজেন তরলে রূপান্তরিত হয় উপসংহার বিজ্ঞানী প্রিস্ট্‌লে, ল্যাভয়সিয়ে ও শিলে-র হাত ধরে আবিষ্কৃত অক্সিজেন আজ আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মৌলটির প্রতিটি শ্বাসে-প্রশ্বাসে, প্রতিটি দহনে এবং প্রতিটি জীবের অস্তিত্বে রয়েছে অবিচ্ছিন্ন অবদান। তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, কেমিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া, বিজ্ঞান ইতিহাস জার্নাল

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: