শহীদ মেজর নাজমুল হক
সমাজকাল
প্রকাশ: ১৩:৪২, ১ আগস্ট ২০২৫

সমাজকাল ডেস্ক :
ছুটি ন্যুই
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা বীর সেনানী শহীদ মেজর নাজমুল হকের আজ জন্মদিন। ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আমিরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই বীর যোদ্ধা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার জন্য। ৩৩ বছর বয়সেই প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য। কিন্তু রেখে গেছেন ইতিহাসে চির অমলিন হয়ে থাকার মতো দৃষ্টান্ত।
প্রথম বিদ্রোহের পতাকাবাহী
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে যখন সারা দেশে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ চলমান, তখন মেজর নাজমুল হক ছিলেন নওগাঁয় ৭ ইপিআর উইংয়ের অধিনায়ক। তিনি প্রথম বিদ্রোহীদের অন্যতম—যিনি নিজের হাতে উত্তোলন করেছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
গঠন করেছিলেন ইপিআর মুজাহিদ বাহিনী
স্থানীয় যুবকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে গঠন করেন ‘ইপিআর মুজাহিদ বাহিনী’। তাঁদের মাধ্যমে বগুড়া, রাজশাহী, নওগাঁ, পাবনা ও দিনাজপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা হানাদার মুক্ত করেন। ২৮ মার্চ রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে তাঁর বাহিনীর অভিযান হানাদার বাহিনীকে বড় ধাক্কা দেয়। একের পর এক সফল অপারেশন, আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্ব এবং সাহসিকতায় মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
৭ নম্বর সেক্টরের প্রধান
১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিনি মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন। তরংগপুর ছিল তাঁর হেডকোয়ার্টার। প্রায় ১৫ হাজার যোদ্ধার প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব দেন তিনি। তাঁর অধীনেই যুদ্ধ করেছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর।
অকাল প্রয়াণ ও সম্মান
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, মিত্রবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারতের শিলিগুড়ি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শহীদ হন মেজর নাজমুল হক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদের চত্বরে তাঁর সমাধি রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর মেজর কাজী নুরুজ্জামান ৭ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গুরুত্ব
বাংলাদেশের ইতিহাসে মেজর নাজমুল হক শুধু একজন সেক্টর কমান্ডারই নন, ছিলেন প্রথম পর্যায়ের বিদ্রোহের পুরোধা, স্বাধীনতার প্রেরণাদাতা, যুদ্ধকৌশলের পথপ্রদর্শক এবং অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর দিকনির্দেশনায় গড়ে ওঠা প্রতিরোধ বাহিনী মুক্তিযুদ্ধে গতিশীলতা ও সাহস জুগিয়েছিল।
শহীদ মেজর নাজমুল হকের মতো বীর সেনানিদের স্মরণ শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি ইতিহাসের ঋণ শোধের একটি ক্ষুদ্র প্রয়াস। আজ তাঁর জন্মদিনে জাতি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে এই মহান বীরকে, যাঁর রক্তের ঋণে রঞ্জিত আমাদের স্বাধীনতার মানচিত্র।