বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট ২০২৫

| ১২ ভাদ্র ১৪৩২

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সমাজকাল

প্রকাশ: ১৪:২৯, ৬ আগস্ট ২০২৫

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: সাত সরকারি কলেজকে নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে রাজধানীর সাত সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। দীর্ঘদিনের ‘অধিভুক্তি’ অবস্থা থেকে মুক্তি এবং একটি স্বতন্ত্র পরিচয়ের আকাঙ্ক্ষা থেকেই এ কর্মসূচি।

বুধবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে। বেলা ১১টার দিকে মূল ফটক থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ মিছিল, যা সায়েন্সল্যাব মোড়, নীলক্ষেত হয়ে ইডেন মহিলা কলেজ পর্যন্ত যায় এবং পরে আবার ঢাকা কলেজে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

“অধিভুক্তি নয়, চাই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়” — শিক্ষার্থীদের মূল দাবি

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, সাত কলেজের অধিভুক্ত অবস্থায় পড়াশোনা করা ছিল আত্মপরিচয়হীন, দুর্বিষহ এবং বৈষম্যমূলক। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষার সময়সূচি, রেজাল্ট, প্রশাসনিক জটিলতা, এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার অনিশ্চয়তার কারণে তারা বারবার ভুগেছেন। অধিভুক্তি শব্দটি আজ তাদের কাছে অবমাননার প্রতীক।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, “ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েও অধ্যাদেশ জারিতে গড়িমসি হচ্ছে। আমরা চাই, দ্রুত এই অধ্যাদেশ প্রকাশ করে আমাদের পরিচয়ের নিশ্চিতি দেওয়া হোক।”

 লড়াই দীর্ঘ দিনের, এখন সময় ফল তোলার

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ‘সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর টিম’-এর ফোকাল পারসন আব্দুর রহমান বলেন, “আমরা শিক্ষা সিন্ডিকেটের কোনো ষড়যন্ত্র মানব না। আমাদের আন্দোলন দীর্ঘদিনের। এখন সময় এসেছে সরকার ঘোষিত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখার।”

অধ্যাদেশ পাসের দীর্ঘ পথ এবং শিক্ষার্থীদের শঙ্কা

শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা করছেন, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের জন্য যে পাঁচ স্তরের আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রয়েছে তা সময়ক্ষেপণের শিকার হতে পারে। প্রক্রিয়াটির ধাপগুলো হলো—

১. ইউজিসি খসড়া তৈরি করবে

২. তা যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে

৩. সংশোধিত খসড়া ফেরত এসে ইউজিসিতে যাবে

৪. শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হবে

৫. রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তা গেজেট আকারে প্রকাশ পাবে

শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, এ প্রক্রিয়ায় বিশেষ করে আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ধাপে বিলম্বের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই এখনই যৌক্তিক সময়সীমা নির্ধারণ করে অধ্যাদেশ প্রকাশ না হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে বলে তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পটভূমি

চলতি বছরের ২৬ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে কেন্দ্র করে একটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাবিত নাম অনুযায়ী এটির নাম রাখা হয় “ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি”।

এই সাত কলেজ হলো: ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।

বর্তমানে চারটি স্কুলের অধীনে মোট ২৩টি বিষয়ের পাঠদান চালুর প্রস্তাব রয়েছে। তবে বাস্তবায়নযোগ্যতা নির্ভর করছে অধ্যাদেশের দ্রুত জারির ওপর।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিছক প্রশাসনিক নয়—এটি তাদের আত্মপরিচয়, সম্মান ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আশা পূরণ করতে।

আরও পড়ুন

শীর্ষ সংবাদ: