প্লেটোর দর্শনে প্রশান্তিময় জীবনের ১০ পাঠ
সমাজকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪:২০, ১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৩৬, ১ নভেম্বর ২০২৫
ছবি : সংগৃহীত
জীবনের ব্যস্ততা, প্রতিযোগিতা এবং ক্রমাগত পরিবর্তনের ভেতর মানুষ সবচেয়ে বেশি খুঁজে মানসিক প্রশান্তি ও জীবনের অর্থ। এসবের সন্ধান পাওয়া যায় প্লেটোর দর্শনে। মানুষের প্রকৃত সত্তা দেহ নয়, বরং আত্মা। এই উপলব্ধিই প্লেটোর ভাবনার কেন্দ্র। আত্মার পরিচর্যা, সংযম ও প্রজ্ঞার বিকাশের মাধ্যমে মানুষ প্রশান্তিময় জীবন লাভ করতে পারে। প্লেটোর দর্শন থেকে প্রশান্তিময় জীবনের দশটি পাঠ উল্লেখ করা হলো।
এক. জ্ঞান অনুসন্ধানই জীবনের শ্রেষ্ঠ লক্ষ্য
প্লেটো বিশ্বাস করতেন, জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো জ্ঞান ও সত্যের সন্ধান। মানুষের আনন্দ ভোগবিলাসে নয়, বরং আত্মজ্ঞান ও যুক্তির চর্চায় নিহিত। তিনি বলেছেন, অপরীক্ষিত জীবন বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। প্রতিদিন শেখা, চিন্তা করা ও নিজের ভুল সংশোধন করাই মানুষের প্রকৃত উন্নতি।
দুই. জীবনে সংযম ও পরিমিতি বজায় রাখা
প্লেটো বলেছেন, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ বজায় রাখা উচিত। ভোজন, অর্থ, আনন্দ বা ক্ষমতার লালসা, যেকোনো ক্ষেত্রে অতিরিক্ততা আত্মার ভারসাম্য নষ্ট করে। সংযম মানুষকে আত্মনিয়ন্ত্রিত করে, তার ভেতর স্থিরতা আনে।
তিন. আবেগ ও আকাঙ্ক্ষার নিয়ন্ত্রণ
সুখী হতে হলে নিজের আবেগ ও ইচ্ছাকে বশে আনতে হয়। সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, এই সবই সাময়িক। প্লেটো শেখান, পরিস্থিতি নয়, আমাদের প্রতিক্রিয়াই নির্ধারণ করে জীবনের শান্তি। যে নিজের রাগ, ভয়, লোভ ও আকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, সেই প্রকৃত জ্ঞানী।
চার. ন্যায়ের পথে চলা
প্লেটোর চারটি অনন্য গুণ ছিল। প্রজ্ঞা, সাহস, সংযম ও ন্যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজে প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ দায়িত্ব আছে, আর সবাই যদি ন্যায়বোধে অবিচল থাকে, তবেই সমাজে ভারসাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ন্যায়ের অনুশীলন মানুষকে অন্তর থেকে নির্মল করে।
পাঁচ. যা পরিবর্তন করা যায় না, তা মেনে নেওয়া
জীবনের অনেক কিছুই আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। প্লেটো মনে করতেন, নিয়তির কাছে আত্মসমর্পণ দুর্বলতা নয়, বরং প্রজ্ঞা। যা বদলানো সম্ভব নয়, তা নিয়ে হতাশ না হয়ে নিজের চিন্তা ও কর্মকে ইতিবাচক রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ।
ছয়. সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন
প্লেটো মানুষকে শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির পথে আহ্বান জানাননি, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বের কথাও বলেছেন। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের কর্তব্য হলো সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখা। নৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন উন্নত হয়, সমাজও তেমন আলোকিত হয়।
সাত. চিন্তা ও ধ্যানের মাধ্যমে আত্মার যত্ন নেওয়া
প্লেটোর মতে, আত্মা চিরন্তন সত্যের সন্ধানে থাকে। সেই সত্যের নাগাল পাওয়া যায় চিন্তা, ধ্যান ও আত্মমন্থনের মাধ্যমে। তিনি মানুষকে আহ্বান করেছেন নিজের অন্তর্লোককে জানার, নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করার। কারণ আত্মার শান্তিতেই জীবনের প্রকৃত শান্তি।
আট. বন্ধুত্ব ও সমাজজীবনের মূল্য
প্লেটো বলেছেন, বন্ধুত্ব আত্মাকে উজ্জ্বল করে। প্রকৃত বন্ধুরা মানুষকে সত্যের পথে রাখে, আত্মচিন্তার সহায়ক হয়। পাশাপাশি তিনি সমাজজীবনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। মানুষের সার্থকতা কেবল নিজের উন্নতিতে নয়, বরং অন্যের উপকারেও নিহিত।
নয়. সরল জীবন যাপন করা
রলতা মানেই স্বাধীনতা। প্লেটো বলেছেন, যে মানুষ ভোগবিলাসে মত্ত না হয়ে প্রয়োজনের সীমায় জীবন কাটায়, সেই প্রকৃত শান্তি পায়। অপ্রয়োজনীয় আকাঙ্ক্ষা কমালে জীবনের জটিলতাও কমে যায়। সরল জীবন আত্মাকে হালকা করে দেয়।
দশ. মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া
প্লেটো মনে করতেন, দর্শনের সাধনা মানেই মৃত্যুর প্রস্তুতি। তিনি বলেছেন, দার্শনিকরা মৃত্যুর জন্যই জীবন প্রস্তুত করে। মৃত্যু ভয় নয়, বরং এক অনিবার্য সত্য। মৃত্যুচিন্তা মানুষকে অহংকার ও লালসা থেকে মুক্ত করে, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান করে তোলে।
বর্তমান সময়ের জটিল এই পৃথিবীতে প্লেটোর দর্শন হতে পারে প্রশান্তিময় জীবন লাভের অনন্য উপায়। তার দর্শন আমাদের শেখায়, প্রকৃত সুখ আসে আত্মসংযমের মাধ্যমে। প্রজ্ঞা, সংযম, ধৈর্য, ন্যায়, দায়িত্ববোধ ও মৃত্যুচিন্তা, এসব স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েই গড়ে ওঠে অর্থবহ জীবন। বাইরের জগৎ যতই অস্থির থাকুক, অন্তরে যদি স্থিরতা থাকে, তবে মানুষ সুখী হয়, সফল হয়।
-নিউ ট্রেডার ইউ ডটকম অবলম্বনে
