পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে দুদকের অভিযান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:০৮, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে আজ দুদকের গুরুত্বপূর্ণ অভিযান। ছবি: সমাজকাল
সরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয়–বহুল সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে সম্ভাব্য অনিয়ম–দুর্নীতি চিহ্নিত করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট অভিযান জোরদার করেছে। তার অংশ হিসেবে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আজ (১৯ নভেম্বর) একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযোগ ছিল—স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, আইসিইউ–সাপোর্টেড যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য উপকরণ ক্রয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় নানাবিধ অনিয়ম–দুর্নীতির আশঙ্কা।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, পটুয়াখালী থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট টিম বুধবার সকালেই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের কাছ থেকে টেন্ডার–সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। একই সঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের মৌখিক ও লিখিত ব্যাখ্যাও গ্রহণ করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা যায়—সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের টেন্ডার ডকুমেন্ট দাখিলের শেষ সময়সীমা ৩০ নভেম্বর ২০২৫। অর্থাৎ টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনো চলমান, তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ, মূল্যায়ন বা চূড়ান্ত বরাদ্দ এখনো সম্পন্ন হয়নি।
এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে জমা দেওয়া নথিপত্রে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট অনিয়ম দৃশ্যমান নয়, তবে নথিগুলোর গভীরতর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এনফোর্সমেন্ট ইউনিট জানায়—সংগৃহীত নথি পরীক্ষা–নিরীক্ষা, বিল–টেন্ডার কাঠামো বিশ্লেষণ, টেন্ডার বোর্ডের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য স্বার্থ–সংঘাতের খতিয়ে দেখাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দ্রুতই কমিশনের কাছে দাখিল করা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে টেন্ডার অনিয়ম—বিশেষত যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অতিমূল্যায়ন, নিম্নমানের সরঞ্জাম সরবরাহ, ‘প্রিবিডিং সিন্ডিকেট’ গঠন, এবং যোগ্যতা যাচাইয়ে প্রভাব—দেশজুড়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায়। পটুয়াখালীর নতুন মেডিকেল কলেজটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের বড় বাজেটীয় বরাদ্দ পেয়েছে, যেখানে উচ্চমূল্যের চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় প্রকল্পগুলো দুর্নীতির উচ্চ–ঝুঁকিতে থাকে বলে দুদক পূর্ববর্তী একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
এ ধরনের প্রকল্পে অনিয়মের যে সব পদ্ধতি সাধারণত দেখা যায়—টেন্ডার নথি এমনভাবে তৈরি করা যাতে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষেই সুবিধা যায়, ক্রয়ের প্রকৃত বাজারদর গোপন বা অস্পষ্ট রাখা, একই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানকে প্রতিযোগী বিডার হিসেবে দাঁড় করানো
দুদক সূত্র বলছে, এসব ঝুঁকির কারণেই এই প্রকল্পটি অভিযানের আওতায় আনে।
দুদকের সাম্প্রতিক কৌশলগত পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য–খাতকে উচ্চ অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছে। বিশেষত হাসপাতাল অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ক্রয়, সিভিল–ওয়ার্কস এবং কল্যাণকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
এনফোর্সমেন্ট টিমের এক কর্মকর্তা সমাজকালকে বলেন—‘সরঞ্জাম ক্রয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই অনিয়ম প্রতিহত করা আমাদের মূল লক্ষ্য। অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা নথি সংগ্রহ করেছি, যাতে পরবর্তীকালে কোনো সিন্ডিকেট বা কারসাজির সুযোগ না থাকে।’
