‘আপনি বেশি কথা বলেন, আদালত বিব্রত হয়’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:৫৪, ৩ নভেম্বর ২০২৫
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। ছবি: সমাজকাল
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেনকে ভর্ৎসনা করে বলেছেন, ‘আপনি বেশি কথা বলেন। এমন এমন কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়।’
সোমবার (৩ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল–১–এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বেঞ্চে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে’ রাজধানীর রামপুরায় দুইজনকে হত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তৃতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে এই মন্তব্য করেন আদালত।
বেঞ্চের অপর সদস্য ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নিহত শহীদ মো. নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহাকে জেরা করছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। জেরার একপর্যায়ে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘আপনার স্বামীকে কে গুলি করেছিল, আপনি কি দেখেছেন?’
প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানানো হলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এতে আপনার লাভ কী হবে? তার স্বামী মারা গেছে, সেটিই এভিডেন্স। আসামিদের নামও বলা হয়নি।’
কিন্তু আইনজীবী যুক্তি দেখিয়ে বলেন, ‘লাভের হিসাব অনেক দীর্ঘ, মাই লর্ড। এই প্রশ্নে আমার আসামিদের লাভ হতেও পারে।’
এ সময় আদালত তাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি বেশি কথা বলেন। এমন এমন কথা বলেন যা আদালতের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। আপনার এসব প্রশ্নে লাভ কী? সাক্ষী একজন ভুক্তভোগী—তার সাক্ষ্যে আপনার আসামিরা তো মুক্তি পেয়ে যাবে না।’
পরে বিচারক আরও বলেন, ‘আমরা যদি ভুল করি, তাহলে আপিলের সুযোগ আছে। এটা এক ধরনের হেয়ারসে সাক্ষ্য; তার স্বামী মারা গেছেন, তাই সাক্ষ্যটি রেকর্ড করা হলো।’
এরপর আমির হোসেন বলেন, ‘জ্বি মাই লর্ড,’ এবং জেরা শেষ করেন।
বেলা ১১টা ২৭ মিনিটে নিহত নাদিম মিজানের স্ত্রী নিহা সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন, সঙ্গে ছিল তিন বছরের ছেলে আনাস বিন নাদিম। শপথ নিয়ে তিনি ২০২৪ সালের ১৯ জুলাইয়ের ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন এবং বিচার দাবি জানান।
পরে পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন এবং গ্রেপ্তার আসামি এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে সারওয়ার জাহান তাকে জেরা করেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন গাজী এম.এইচ. তামিম; সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, আবদুস সাত্তার পালোয়ান ও সাইমুম রেজা তালুকদারসহ অন্যরা।
এই মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন রামপুরা ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার।
পলাতক চার আসামির মধ্যে রয়েছেন—ডিএমপি’র সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান,খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম,রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান এবং সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
গত ১০ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
