প্রাকৃতিক দুর্যোগে বছরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০–৬০ লাখ মানুষ
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নেই সরকারি হাসপাতালে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১:৫২, ৯ অক্টোবর ২০২৫

দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে এক সেমিনারে জানানো হয়েছে।
রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও ভূমিধ্বসসহ নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। এসব দুর্যোগে প্রতি বছর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, এই দুর্যোগ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। অথচ দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যত অনুপস্থিত।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এডাব (অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ) ‘দুর্যোগ ও সংকটকালে মানসিক স্বাস্থ্য’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন এডাবের সভাপতি কাজী বেবী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও উৎস’র নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা কামাল যাত্রা।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ ও ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বছর ৫০–৬০ লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ঘটনার প্রভাব শুধু বসতবাড়ি বা জীবিকায় সীমাবদ্ধ নয়— নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের মানসিক স্বাস্থ্যেও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।
মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, “২০২২ সালের সিলেটের ভয়াবহ বন্যার পর বহু পরিবার উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও হতাশায় ভুগেছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আগমনের সময় বাস্তুচ্যুত মানুষেরা মারাত্মক মানসিক সংকটে পড়েছিলেন। কোভিড–১৯ মহামারির সময়ও পুরো সমাজ ভয়, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, কর্মহীনতা ও শোকের চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক ‘জুলাই আন্দোলন’ ও পরবর্তী সহিংসতা দেশের মানুষের মনে গভীর মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। তরুণ প্রজন্ম বিশেষভাবে এই পরিস্থিতিতে আঘাত, ভীতি ও হতাশার অভিজ্ঞতা পেয়েছে।
নারীদের দুর্যোগকালে ঝুঁকির দিকটি তুলে ধরে তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্র, ত্রাণ বিতরণ এলাকা বা বাস্তুচ্যুত অবস্থায় লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি ও শোষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা যথাযথ সেবা না পাওয়ায় শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন।
শিশুরা দুর্যোগে সবচেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় বলে জানান বক্তারা। তারা বলেন, ঘরবাড়ি হারানো, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া বা প্রিয়জন হারানোর ঘটনায় তারা ভয়, দুঃস্বপ্ন, উদ্বেগ ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মতো উপসর্গে ভোগে।
মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, “বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাঠামো এখনও সীমিত। প্রতি এক লাখে একজনেরও কম মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সরকারি হাসপাতালগুলোতে দুর্যোগ–পরবর্তী মানসিক সেবা কার্যত অনুপস্থিত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় ‘মনোসামাজিক সহায়তা’ বিষয়টি এখনও প্রান্তিক অবস্থানে।”
তিনি বলেন, “সামাজিক কলঙ্ক, অজ্ঞতা ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের অভাবের কারণে মানুষ মানসিক সহায়তা চাইতে দ্বিধাবোধ করে। অথচ দুর্যোগ-পরবর্তী মানসিক পুনর্বাসন একটি মানবিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব হওয়া উচিত।”