১৯ বছরে প্রায় ২ কোটি মানুষকে চক্ষু সেবা দিয়েছে ব্র্যাক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০:০৪, ৮ অক্টোবর ২০২৫

‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’-কে সামনে রেখে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক চক্ষু সেবা কার্যক্রমের ১৯ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে। এই সময়ের মধ্যে সারা দেশে প্রায় ১ কোটি ৭৭ লাখ মানুষ ব্র্যাকের চোখের সেবা কার্যক্রম থেকে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন।
এ বছর ‘বিশ্ব দৃষ্টি দিবস’ উপলক্ষে ব্র্যাক প্রায় ১০ হাজার মানুষকে চক্ষু সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ৬১ জেলায় বিস্তৃত এই কর্মসূচির আওতায় ৩৫০টিরও বেশি চক্ষু শিবির ও ৫০টিরও বেশি সচেতনতামূলক র্যালি আয়োজন করা হচ্ছে। এতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
প্রায় দুই দশক ধরে ব্র্যাক বিনামূল্যে প্রাথমিক দৃষ্টি পরীক্ষা থেকে শুরু করে জটিল রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পর্যন্ত সেবা দিয়ে আসছে।
এ পর্যন্ত:১ কোটি ১০ লাখ মানুষ নিকট দৃষ্টির ত্রুটি বা ‘প্রেসবায়োপিয়া’ শনাক্তকরণে পরীক্ষা পেয়েছেন।
২২ লাখেরও বেশি চশমা বিতরণ করা হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই ১৭,৭৪১ জন ছানি রোগী শনাক্ত ও ১৩,১৯১ জনের ছানি অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে
মানসম্মত সেবা নিশ্চিতে ব্র্যাক অংশীদার হাসপাতালগুলোর অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছানি অপারেশন পরিচালনা করে।
দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি নিরসন ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরিতে ব্র্যাকের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে ভিশনস্প্রিং ও সাইটসেভারস।
ভিশনস্প্রিং বিগত ১৯ বছর ধরে ব্র্যাকের সঙ্গে স্বল্পমূল্যে পাঠের চশমা ও দৃষ্টি সেবা প্রদানে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদার। দুটি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি এখন দেশের ৬১ জেলায় বিস্তৃত।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. মো. আকরামুল ইসলাম বলেন, “চোখের চিকিৎসা সেবার সুযোগবঞ্চিত মানুষের কাছে এই সেবাগুলো পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রায় দুই দশক আগে ব্র্যাক এই কার্যক্রম শুরু করে। আজ আমরা সেই জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর অঙ্গীকার করছি, যাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য কেড়ে নিচ্ছে নিরাময়যোগ্য অন্ধত্ব।”
ভিশনস্প্রিং বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মিশা মাহজাবীন বলেন, “দৃষ্টিজনিত ত্রুটি শুধু একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি মানুষের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও সামাজিক মর্যাদাকেও প্রভাবিত করে। তাই সবার জন্য দৃষ্টিসেবা সহজলভ্য করাই আমাদের লক্ষ্য।”
বাংলাদেশে অন্ধত্বের চিত্র
একটি সাম্প্রতিক জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭.৫ লাখ মানুষ অন্ধত্বে ভুগছেন—এর প্রধান কারণ চিকিৎসাবিহীন ছানি।
ছানির পাশাপাশি প্রেসবায়োপিয়া বা নিকট দৃষ্টির ত্রুটি এখন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের বড় চ্যালেঞ্জ। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের একজন এই সমস্যায় ভোগেন, যাদের বেশিরভাগের বয়স ৩৫ বছরের বেশি।
ব্র্যাক, ভিশনস্প্রিং ও সাইটসেভারসের সমন্বিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশে চক্ষু সেবাকে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। দীর্ঘমেয়াদে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে টেকসই স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।