পাউডারে ক্যানসারের উপাদান
জনসন অ্যান্ড জনসনকে সাড়ে ৯৬ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯:০২, ৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:৫৮, ৯ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনকে ৯৬৬ মিলিয়ন বা ৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, কোম্পানির ট্যালকম বেবি পাউডারে থাকা ক্যানসার-সৃষ্টিকারী উপাদান অ্যাজবেস্টস ফাইবার একজন নারীর মৃত্যুর জন্য দায়ী।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা মে মুর ২০২১ সালে ৮৮ বছর বয়সে মেসোথেলিওমা নামের বিরল ক্যানসারে মারা যান। মৃত্যুর পর তার পরিবার জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে মামলা করে অভিযোগ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত ট্যালকম পাউডারে থাকা অ্যাজবেস্টসই ছিল ওই ক্যানসারের মূল কারণ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে ঘোষিত রায়ে আদালত কোম্পানিকে ৯৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। এর মধ্যে—১ কোটি ৬০ ডলার ভুক্তভোগীর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং ৯৫ কোটি ডলার শাস্তিমূলক অর্থ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে।
তবে এই দণ্ডমূলক ক্ষতিপূরণ পরবর্তীতে আপিলে কমে আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের মতে, শাস্তিমূলক ক্ষতিপূরণ সাধারণত প্রকৃত ক্ষতির ৯ গুণের বেশি হওয়া উচিত নয়।
ভুক্তভোগীর পরিবারের আইনজীবী ট্রে ব্রানহাম বলেন, “আমরা আশা করছি জনসন অ্যান্ড জনসন অবশেষে এই অর্থহীন মৃত্যুগুলোর জন্য দায় স্বীকার করবে।”
রায়ের পর জনসন অ্যান্ড জনসনের আইন বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এরিক হাস এক বিবৃতিতে বলেন, “এই রায় অত্যন্ত অন্যায্য ও অসাংবিধানিক। আমরা আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছি।” তিনি আরও অভিযোগ করেন যে, বাদীপক্ষ আদালতে ‘ভুয়া বৈজ্ঞানিক তথ্য’ উপস্থাপন করেছে।
মেসোথেলিওমা রোগটি দীর্ঘমেয়াদি অ্যাজবেস্টসের সংস্পর্শে থাকার ফলেই হয় বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। যদিও জনসন অ্যান্ড জনসন দাবি করে, তাদের ট্যালকম পাউডারে কখনোই অ্যাজবেস্টস ছিল না।
২০২০ সালেই কোম্পানিটি যুক্তরাষ্ট্রে ট্যালকম-ভিত্তিক পাউডার বিক্রি বন্ধ করে দেয় এবং ভুট্টার গুঁড়োভিত্তিক নতুন পণ্য চালু করে।
আদালতের নথি অনুযায়ী, জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে এখনো ৬৭ হাজারেরও বেশি মামলা চলমান। এর বেশিরভাগ মামলাই ডিম্বাশয়ের ক্যানসার-সংক্রান্ত অভিযোগ, আর কিছু মেসোথেলিওমা আক্রান্ত রোগীর মামলা।
বিশ্বজুড়ে এই মামলাগুলো ট্যালকম পাউডারের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে—যে পণ্যটি একসময় নবজাতকের ত্বকের যত্নে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হতো, তা এখন ক্যানসারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আলোচনার কেন্দ্রে।