ইউক্রেন যুদ্ধে প্রাণ হারালেন রাজবাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরু
রাজবাড়ী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:৩৭, ১০ অক্টোবর ২০২৫

রাজবাড়ী জেলার এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য নজরুল ইসলাম (৪৭) ইউক্রেন যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। রাশিয়ায় গিয়ে যুদ্ধ করার পর দীর্ঘ সাত মাস নিখোঁজ ছিলেন তিনি। অবশেষে গত ৮ অক্টোবর বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তার মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয় পরিবারকে।
নিহত নজরুল ইসলাম সদর উপজেলার রামকান্তপুর চরপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম আলী ফকিরের ছেলে। চার মেয়ের জনক নজরুলের মৃত্যুসংবাদে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়।
নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ল্যান্স কর্পোরাল পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালে অবসর নেওয়ার আগে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেন কঙ্গোতে (২০১৩)। অবসরের পর রাজবাড়ীর শ্রীপুর বাজারে মুদি ব্যবসা শুরু করেন, কিন্তু বড় ক্ষতির মুখে পড়ে আর্থিক সংকটে পড়েন তিনি।
এই অবস্থায় স্থানীয় দালাল ফরিদ হোসেন তাকে রাশিয়ার এক শপিংমলে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরির প্রলোভন দেন। পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও নজরুল ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। সেখানে পৌঁছে তিনি বাধ্য হন এক মাসের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে, এরপর ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয় তাকে।
‘ফোন বন্ধ পেলে ধরে নিও আমি আর নেই’
যুদ্ধের সময় নিয়মিত পরিবারে ফোন করতেন নজরুল। শেষবার ৩০ এপ্রিল কথা হয় তার স্ত্রীর সঙ্গে। সেদিন তিনি ফোনে বলেন, ‘আমি ব্যাংকে যাচ্ছি টাকা পাঠাতে। যদি ফোন বন্ধ পাও, ধরে নিও আমি আর বেঁচে নেই।’ তারপর থেকেই পরিবার আর কোনো খোঁজ পায়নি তার। বহুবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য দপ্তরে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য মেলেনি। অবশেষে সাত মাস পর আসে তার মৃত্যুসংবাদ।
নিহতের স্ত্রী আইরিন আক্তার বলেন,‘চার মেয়েকে নিয়ে এখন আমি কিভাবে বাঁচব! আমার একটাই চাওয়া— সরকার যেন আমার স্বামীর লাশটা দেশে ফিরিয়ে আনে। শেষবার অন্তত একবার স্বামীকে দেখতে চাই।’
বড় ভাই অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রহিম বলেন,‘দালাল ফরিদ আমার ভাইকে প্রলুব্ধ করেছে। সরকার যেন দ্রুত তার মরদেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করে।’
অভিযুক্ত ফরিদ অবশ্য দাবি করেন, নজরুল ‘বিকন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে রাশিয়ায় যান এবং নিজ ইচ্ছায় রুশ সেনাবাহিনীর লজিস্টিক হ্যান্ড হিসেবে চুক্তি করেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়া হক বলেন, ‘বিষয়টি অফিসিয়ালি এখনও মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের জানানো হয়নি। তবে আমি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। মরদেহ ফেরতের বিষয়ে উদ্যোগ নিচ্ছি।’