চাকসু নির্বাচন
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনা চায় ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল
চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭:৫৬, ৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৫৩, ৭ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভোট গণনার দাবি জানিয়েছে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’। প্যানেলের প্রার্থীরা এই দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে স্মারকলিপি দিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে কঠোর নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যালট ছাপানোরও দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (৬ অক্টোবর ) দুপুরে প্যানেলের প্রার্থীরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিনের হাতে এই স্মারকলিপি তুলে দেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষে প্রতি প্যানেল থেকে অন্তত একজন করে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও পোলিং এজেন্ট রাখার সুযোগ দিতে হবে। ভোট প্রদান ও গণনা পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা জরুরি। প্রতিটি ব্যালটে সিরিয়াল নম্বর যুক্ত করার পাশাপাশি স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখতে হবে।
স্মারকলিপিতে ভোট দেওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের ব্যবস্থা, নারী প্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নির্বাচনের দিন শহর থেকে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাস থেকে শহরে যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থার দাবি জানানো হয়।
স্মারকলিপি দেওয়ার পর দুপুর দুইটায় চাকসু ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির তথ্য জানান বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। এতে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী সুদর্শন চাকমা, সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম, যোগাযোগ ও আবাসন সম্পাদক প্রার্থী মোশরেফুল হক ও পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ আকিব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুদর্শন চাকমা। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন হচ্ছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে এবং শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন না হলে এই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং এর অস্বচ্ছতা থেকে যে অভিজ্ঞতা লব্ধ হয়েছে, তার ভিত্তিতে প্রশাসনের কাছে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য চাকসু নির্বাচনের জন্য আরও স্পষ্ট ও জোরদার ভূমিকা দাবি করছি।’
এসময় এজিএস পদপ্রার্থী জাকিরুল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ১০টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত বৈচিত্র্যের ঐক্যের প্রত্যাশা, প্রশাসন তাদের প্রস্তাব আমলে নিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ যথা শিগগিরই প্রকাশ করবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বৈচিত্র্যের ঐক্য প্যানেলের সহসভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, ‘প্রশাসন বলেছে, আমাদের সব দাবি যথার্থ, তবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। এরপর আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, স্বচ্ছতার খাতিরে কার কাছ থেকে ওএমআর নেওয়া হচ্ছে, সেটি যেন অন্তত জানানো হয়, যাতে দীর্ঘদিন পর হওয়া এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হয়।’
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ক্যাম্পাসের কলার ঝুপড়িতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা করা হয়। প্যানেল ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রোনাল চাকমা। তখন জানানো হয়, প্যানেলে রয়েছে সাতটি রাজনৈতিক সংগঠনের ১১ পাহাড়ি শিক্ষার্থী ও পাঁচ নারী শিক্ষার্থী।
১৫ অক্টোবর তিন দশক পর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে হল সংসদ নির্বাচনও। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন ও ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী চাকসু ও হল সংসদে চূড়ান্ত প্রার্থী আছেন ৯০৭ জন। এর মধ্যে চাকসুর ২৬টি পদের বিপরীতে ৪১৫ জন ও হল সংসদ নির্বাচনে ৪৮৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।