তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘাত
বান্দরবানের ওপারে মিয়ানমারে ফের উত্তেজনা
গোলাগুলির শব্দে আতঙ্ক
শহিদুল ইসলাম, ঘুমধুম সীমান্ত থেকে ফিরে
প্রকাশ: ২৩:৫৬, ৪ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:০৯, ৫ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফের নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু চাকমাপাড়া সীমান্তের ওপারে, আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৩৪ নম্বর পিলার থেকে ৩০০–৪০০ মিটার ভেতরে তীব্র গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, সংঘর্ষে অংশ নেয় তিন সশস্ত্র গোষ্ঠী—আরাকান আর্মি (এএ), আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি) ও আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন)।
স্থানীয় বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, “রাতের দিকে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড শব্দে গুলি শুরু হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল আতশবাজি ফাটানো হচ্ছে, পরে বুঝতে পারি এটি আসলে গোলাগুলির শব্দ। থেমে থেমে পুরো রাতজুড়েই চলেছে।”
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির শব্দে সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই সন্তান-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে যান।
সীমান্তে বিজিবির সর্বোচ্চ সতর্কতা
রামু ব্যাটালিয়ন (৩০ বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ মূলত সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬-এর মধ্যবর্তী স্থান ও বুচিটং সীমান্ত চৌকির দায়িত্বাধীন এলাকায় ঘটছে।
রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “পোয়ামুহুরী ও বুচিটং সীমান্ত চৌকির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার শূন্যরেখার ওপারে সংঘর্ষ চলছে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।”
কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলমও সংঘর্ষের খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, “সংঘর্ষ মিয়ানমারের ভেতরে হলেও আমাদের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”
সংঘর্ষের কারণ: সীমান্তপথের নিয়ন্ত্রণ দখল
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ওপারে কুরিকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকাতেও অনুরূপ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জানিয়েছেন, গত এক মাসে অন্তত চারবার এমন গোলাগুলি হয়েছে।
সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৩৪ থেকে ৫৭ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা দীর্ঘদিন ধরে গরু ও মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই পথের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া নিয়েই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।
বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি ও রুমা সীমান্তে বিজিবি’র সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। অতিরিক্ত টহল জোরদার করা হয়েছে।
রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, “এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।”