খাগড়াছড়িতে সহিংসতা
তদন্তে জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের কমিটি, পরিস্থিতি উত্তপ্ত
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬:০৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ির গুইমারায় সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। চলমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তবে পরিস্থিতি এখনও থমথমে রয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার সাংবাদিকদের জানান, আজকে আমরা এখানে এসেছি যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সমবেদনা জানানোর জন্য। আমরা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেব এবং চিকিৎসার দায়িত্বও প্রশাসন নেবে।
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, অবরোধকারীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠকে তাদের আট দফার মধ্যে সাতটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আমরা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান চাই। তারা অবরোধ প্রত্যাহার করলে আমরাও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করব।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, সহিংসতায় হতাহতদের পরিবারকে মামলা করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যদি তারা মামলা না করে, তবে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
পরিদর্শনের সময় খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেফালিকা ত্রিপুরাও উপস্থিত ছিলেন।
খাগড়াছড়িতে চলমান এ উত্তেজনা শুরু হয় বুধবার ২৪ সেপ্টেম্বর। আগের দিন মঙ্গলবার রাতে ‘অচেতন অবস্থায়’ ক্ষেত থেকে এক মারমা কিশোরীকে উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। সে রাতেই ওই কিশোরীর বাবা ধর্ষণের অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন ভোরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এর মধ্যে ধর্ষণের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয় খাগড়াছড়িতে। এই আন্দোলন এক সময় সহিংস হয়ে ওঠে।
১৪৪ ধারা জারির পাশাপাশি অতিরিক্ত সেনা ও বিজিবি মোতায়েনের পরও পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। রবিবার ২৮ সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় তিনজন।
পরে জুম্ম ছাত্র জনতার ডাকা অবরোধ সোমবার ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে শিথিল হওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলার সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পথে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
তবে রাঙামাটির সঙ্গে যান চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, পানছড়ি, মাটিরাঙাসহ নয় উপজেলার সঙ্গেও জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। এসব পথে জরুরি সেবা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করছে না।
স্থানীয়রা বলছেন, খাগড়াছড়িতে সংঘটিত এই সহিংসতা পাহাড়ি অঞ্চলের সামাজিক ও প্রশাসনিক সংবেদনশীলতা আবারও সামনে এনেছে। প্রশাসনের শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা ইতিবাচক হলেও, নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত না হলে দীর্ঘমেয়াদি উত্তেজনার আশঙ্কা থেকেই যায়।