সংসার সামলে প্রতিমা গড়ছেন নারী শিল্পীরা
এম. এ. আযম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮:৩৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২০:২৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কুড়িগ্রামের গ্রামীণ জনপদে শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে এক ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সংসারের কাজের পাশাপাশি এবার প্রতিমা গড়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নারী শিল্পীরা।
আজ রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার দিন থেকে শুরু হয়েছে প্রতিমার রং ও সাজসজ্জার কাজ, আর সেই কাজে পুরুষদের পাশে সমানতালে কাজ করছেন নারীরা।
দূর্গোৎসবের প্রস্তুতিতে নারীর অবদান
পূজা মণ্ডপ ও মন্দিরগুলোতে যেমন সাজসজ্জার ব্যস্ততা, তেমনি কুমোরপাড়া ও পালপাড়ায় প্রতিমা তৈরির কর্মচাঞ্চল্য বেড়েছে। তবে এবারের বিশেষ দিক হলো, স্বামী, সন্তান ও পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পাশে থেকে নারীরাও প্রতিমা গড়ার মূল কাজে যুক্ত হয়েছেন।
পারিবারিক পেশা ও সহজাত নেশার প্রতি ভালোবাসা থেকেই নারীরা এগিয়ে এসেছেন। সংসারের কাজ সেরে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা প্রতিমার কাঠামো তৈরি, সাজসজ্জা, অলংকার বসানো, মুকুট তৈরি ও রঙের কাজ সামলাচ্ছেন। আগে যারা প্রদীপ, ধুপ, কলস ইত্যাদি তৈরির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন, তারাই এখন প্রতিমা নির্মাণের মূল কাজে হাত লাগাচ্ছেন।
নারী শিল্পীদের অভিজ্ঞতা
রাজারহাটের বৈদ্যের বাজারের নারী প্রতিমা শিল্পী বেবী মালাকার বলেন, “এবার জেলায় গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ প্রতিমার অর্ডার এসেছে। আগে সংসারের কাজ সেরে সময় পেতাম না। কিন্তু এবার এত চাপ যে বাধ্য হয়েই স্বামীকে সাহায্য করতে হচ্ছে।”
অন্যদিকে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সপ্তমী মালাকার জানায়, “বাবা একা এত কাজ সামলাতে পারছে না। তাই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে বাবাকে প্রতিমা তৈরিতে সাহায্য করছি।”
কাঁঠালবাড়ি বাজারের পূজা রানী বলেন, “প্রথমবার প্রতিমার মুকুট ও অলংকার বানাতে পেরে আনন্দ লাগছে। আগে পুজোর সরঞ্জাম বানাতাম, এবার কাজের চাপ সামলাতে প্রতিমা তৈরিতেও নামতে হয়েছে।”
পালপাড়ার কারিগরদের অভিজ্ঞতা
দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমা নির্মাণে যুক্ত শিল্পী কালিকান্ত পাল বলেন, “সারা বছর মাটির কাজ করে সংসার চলে না। দুর্গোৎসবই একমাত্র ভরসা। এ বছর আগের তুলনায় বেশি অর্ডার পেয়েছি। তাই মেয়েরা, বউমারা কাজে হাত লাগাচ্ছে। এতে অনেক উপকার হচ্ছে।”
জেলায় পূজা মণ্ডপের সংখ্যা বৃদ্ধি
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ৯ উপজেলায় ৫১৭টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা বেড়েছে ৩২টি।
• সদর উপজেলায়: ৫৫টি
• রাজারহাটে: ১৩১টি
• উলিপুরে: ১২৫টি
• চিলমারীতে: ২৪টি
• নাগেশ্বরীতে: ৬৯টি
• ভূরুঙ্গামারীতে: ২০টি
• রৌমারীতে: ৭টি
• রাজিবপুরে: ১টি
• ফুলবাড়ীতে: ৬৫টি
• কুড়িগ্রাম পৌরসভায়: ২০টি
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনের এই উৎসব।