কুমিল্লায় হাত মাইকে ঘোষণা দিয়ে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ

কুমিল্লার হোমনা উপজেলায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কফিল উদ্দিন শাহর মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হাত মাইকে ঘোষণা দিয়ে এই হামলা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার আসাদপুর ইউনিয়নের আসাদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা জানান, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তার জের ধরেই এ হামলা ঘটে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে।”

ঘটনার সূত্রপাত:

স্থানীয়রা জানায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে ‘বেমজা মহসিন’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে অবমাননাকর একটি পোস্ট দেওয়া হয়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তারা অভিযুক্ত যুবক মো. মহসীনের (৩৫) গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। মহসীন উপজেলার ফকিরবাড়ির আলেক শাহর ছেলে।

ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হোমনা থানা পুলিশ মহসীনকে গ্রেপ্তার করে। পরে বাংলাদেশ ইসলামী যুব সেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় মহসীনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার আদালতে পাঠানো হয় এবং তার রিমান্ড আবেদন করা হয়।

মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ:

বৃহস্পতিবার সকালে উত্তেজিত জনতা মহসীনের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। একই সময় তার পাশেই অবস্থিত কফিল উদ্দিন শাহর মাজারেও হামলা চালানো হয়। আগুনে মাজারের আসবাবপত্র, একটি মোটরবাইকসহ তিনটি ঘর পুড়ে যায়। ভাঙচুর করা হয় দরগাহ কম্পাউন্ডের আরও কয়েকটি স্থাপনা।

প্রশাসনের তৎপরতা:

খবর পেয়ে হোমনা থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খাঁন এবং হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা।

এ সময় পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, “এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পেছনে কোনো ইন্ধন রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

তদন্ত ও নিরাপত্তা:

হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, “ধর্ম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে স্থানীয় জনতা অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বিষয়টি তদন্তাধীন।”

তিনি জানান, বর্তমানে এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।