বেটিং সংস্থার বিজ্ঞাপনে আপত্তিতেই অধিনায়কত্ব হারালেন রিজ়ওয়ান
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭:৪১, ২২ অক্টোবর ২০২৫

পাকিস্তান ক্রিকেটে আবারও নেতৃত্বের পালাবদল। মঙ্গলবার এক দিনের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মোহাম্মদ রিজ়ওয়ানকে। প্রথমে গুঞ্জন ওঠে—ধর্মীয় কারণে তাকে সরানো হয়েছে। কিন্তু ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সত্যিটা একেবারেই অন্য জায়গায়। বেটিং বা জুয়া সংস্থার হয়ে প্রচার করতে রাজি না হওয়ায় রিজ়ওয়ানকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
পিসিবির ঘনিষ্ঠ এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ জানিয়েছে, রিজ়ওয়ান বোর্ডকে সরাসরি জানিয়েছিলেন—তিনি কোনও জুয়া সংস্থার হয়ে বিজ্ঞাপন দেবেন না, এমনকি তাদের লোগোযুক্ত জার্সিও পরবেন না। এই অবস্থান বোর্ডের পছন্দ হয়নি। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে পিসিবি একাধিক আন্তর্জাতিক বেটিং কোম্পানির সঙ্গে স্পনসরশিপ চুক্তি করেছে। রিজ়ওয়ানের এই নীতিগত আপত্তিই তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার মূল কারণ বলে দাবি উঠেছে।
রিজ়ওয়ানের এই অবস্থান নতুন নয়। চলতি বছর ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিসের হয়ে খেলতে গিয়ে তিনি সেই দলের জার্সি থেকে বেটিং সংস্থার নাম সরিয়ে ফেলেছিলেন। মাঠে নেমেছিলেন একমাত্র জুয়া-বিজ্ঞাপন-বর্জিত পোশাকে।
পাকিস্তানে প্রথমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয় যে ধর্মীয় কারণেই তাকে সরানো হয়েছে। বিশেষ করে প্রাক্তন অধিনায়ক রশিদ লতিফ অভিযোগ তোলেন—কোচ মাইক হেসন ‘ধর্মীয় পক্ষপাতদুষ্টতা’ দেখিয়েছেন। লতিফ বলেন, ‘রিজ়ওয়ান কেবল ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে তুলেছিল বলেই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তবে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, বরখাস্তের পেছনে আসল কারণ ধর্ম নয়, বাণিজ্যিক নীতি ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত মতভেদ।
পাকিস্তান বোর্ড সম্প্রতি যেসব বেটিং সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে, তা নিয়েও সমালোচনা বাড়ছে। ইসলামাবাদ থেকে করাচি—সব জায়গায় ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলছেন, ‘এক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে জুয়া সংস্থার প্রচার কতটা নৈতিক?’ অনেকেই মনে করছেন, বোর্ড অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য নিজেদের নীতির সঙ্গে আপস করছে।
ভারতে এই ধরনের প্রচার আগেই আইন করে বন্ধ করা হয়েছে। ভারতীয় বোর্ড (বিসিসিআই) তাদের প্রধান স্পনসর তালিকা থেকে জুয়া সংস্থাকে বাদ দিয়েছে, এমনকি আইপিএলেও ভবিষ্যতে এসব সংস্থার অংশগ্রহণ সীমিত করার পরিকল্পনা চলছে।
রিজ়ওয়ানের জায়গায় অধিনায়ক হয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। তবে আফ্রিদির নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে—দল পরিচালনায় তার অভিজ্ঞতা কতটা, তা নিয়ে এখনই বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ। রিজ়ওয়ান অধিনায়ক থাকাকালীন পাকিস্তান একাধিক সিরিজে ভালো ফল করেছিল। তাই হঠাৎ এই পরিবর্তন ক্রিকেটবোর্ডের ‘অতিমাত্রায় বাণিজ্যনির্ভর’ মানসিকতার প্রতিফলন বলে অনেকেই মনে করছেন।