১২,৯৮০টি সরকারি চিকিৎসক পদ শূন্য
৪৮তম বিশেষ বিসিএসে উত্তীর্ণদের নিয়োগ চান চিকিৎসকরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১৬, ২৮ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ০৩:৪৮, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
দেশের চিকিৎসক সংকট মোকাবেলায় ৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি জানিয়েছে নিয়োগপ্রত্যাশী চিকিৎসকরা।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে ওই দাবি জানান তারা। মানববন্ধনে নিয়োগ প্রত্যাশীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ডা. তুষার, ডা. হামিদুল ইসলাম, ডা. গোলাম ছামদানী, ডা. সালমান ইসলাম রাফি প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে জানানো হয়, দাবি আদায় না হলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে লংমার্চসহ কঠোর কর্মসূচি দেবেন তারা।
এ সময় চিকিৎসকরা বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১২,৯৮০টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। ফলে সাধারণ জনগণ পর্যাপ্ত সরকারি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না। সমাজের বিত্তশালীরা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন এবং ক্ষেত্র বিশেষে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে সক্ষম হন। কিন্তু তৃণমূলের অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর একমাত্র অবলম্বন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, প্রায় ১২ হাজার ৯৮০টি চিকিৎসক পদ ফাঁকা রেখে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত দুরূহ। বর্তমান সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ তার মধ্যে অন্যতম।
তারা আরও বলেন, ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএস-এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগ চলমান রয়েছে, যা বর্তমান সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সফলতা। ইতোমধ্যে এ সমস্যা নিরসনের উদ্দেশ্যে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে জুলাই গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএস-এর মাধ্যমে ৩২০০ জনকে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশ করেছে। তবে ৪৪তম, ৪৫তম,৪৬তম,৪৭তম বিসিএস-এর নিয়োগ প্রক্রিয়া অসমাপ্ত থাকায় ওই বিসিএসগুলোর নিয়োগের বিভিন্ন পর্যায়ে অপেক্ষমাণ চিকিৎসক ৪৮তম সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া ৪৫তম, ৪৬তম, ৪৭তম বিসিএসে (জেনারেল) পদসংখ্যার বিপরীতে কম সংখ্যক প্রার্থী প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলেন, ৪৪তম-৪৮তম বিসিএসগুলোর নিয়োগ সম্পন্ন হওয়ার আগে ৪৮তম থেকে নিয়োগ দেওয়া হলে প্রায় ১৫০০ রিপিট প্রার্থী থাকবে। রিপিট প্রার্থীরা সিনিয়রিটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কারণে ৪৪তম, ৪৫তম, ৪৬তম ও ৪৭তম বিসিএসে যোগদান করবে। অর্থাৎ ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের সহকারী সার্জন পদগুলো পুনরায় ফাঁকা হয়ে যাবে এবং চিকিৎসক সংকট নিরসন হবে না। এতে তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদারের উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হবে।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টার দেওয়া তথ্যমতে, আরও ৩,০০০ শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বাক্ষরিত হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএস-এর বিজ্ঞপ্তির বিশেষ নির্দেশনায় বলা আছে- নতুন পদ সৃষ্টি, পদ বিলুপ্তি, পদোন্নতি, অবসর গ্রহণ, মৃত্যু, পদত্যাগ অথবা অপসারণ ইত্যাদি কারণে বিজ্ঞাপিত শূন্যপদের সংখ্যা পরিবর্তন হতে পারে।
মানববন্ধনে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফরের তথ্য মতে, মেডিকেলের শিক্ষক ঘাটতি সমস্যার সমাধানে সুপারনিউমারারিতে ৭০০০ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২০০০ চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও শিগগিরই পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এক্ষেত্রেও নতুন করে শূন্য পদের সৃষ্টি হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলেন, যেহেতু ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এবং চূড়ান্ত গেজেট হওয়ার আগেই ৩,০০০ শূন্যপদে চিকিৎসক নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে, সেহেতু অবিলম্বে ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মেধাক্রমের ভিত্তিতে শূন্যপদে নিয়োগের সুপারিশ করার দাবি জানান তারা।
