পর্ন তারকার ইসলাম গ্রহণ
অন্যরকম ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮:০৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১৮:০৬, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

ছিলেন পর্ণ সিনেমার তারকা, ইসলামে মুগ্ধ হয়ে হলেন মুসলিম। বিখ্যাত পর্ন তারকা রে লিল ব্ল্যাক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি পর্ন সিনেমায় অভিনয় করা দেড়েও দিয়েছেন। পবিত্র রমজান মাসে তিনি রোজাও রাখেন। ইসলামের অন্যান্য ফরজও পালন করেন।
রে লিল ব্ল্যাকের আসল নাম কে আছাকুরা। ১৯৯৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি জাপানের ওসাকায় জন্মগ্রহণ করেন। এখন তার বয়স ২৮ বছর। তিনি প্রায় ১০০ অ্যাডাল্ট সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে পাবলিক সেক্স অ্যাডভেঞ্চার ১৯ এবং থ্রিসাম ফ্যান্টাসি ১৩।
এদিকে, তার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা নিয়ে নিন্দুকরা তাকে নিয়ে নানা বিরুপ মন্তব্য করেছেন। তবে নিন্দুকদের উদ্দেশ্য তিনি এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, কে কি বললো, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি। তিনি সব জানেন।
মালয়েশিয়া ভ্রমণে গিয়ে এই পর্ন তারকার ধর্ম বিশ্বাসে পরিবর্তন আসে। জীবনে খ্যাতি, সাফল্য এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা থাকা সত্ত্বেও রে লিল প্রায়ই নিজের কাছে কী এক শূন্যতা অনুভব করতেন। তিনি দীর্ঘদিন জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের কাছেই প্রশ্ন তুলছিলেন। কিন্তু আধ্যাত্মিক অন্বেষণের কোনো সুযোগ পাচ্ছিলেন না। এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্বীকার করেছেন, তার সব থাকা সত্ত্বেও পরিপূর্ণতা অনুপস্থিত ছিলো।
একটি অপ্রত্যাশিত অনুসন্ধান হিসেবে তার বিশ্বাসের দিকে যাত্রা শুরু হয়েছিলো। তার কৌতূহল এবং নতুন অভিজ্ঞতার প্রতি উন্মত্ততা তাকে যে এইপথে নিয়ে যাবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
২০২৪ সালের অক্টোবরে রে লিল ব্ল্যাক মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন, দেশটির সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এবং বিখ্যাত খাবার উপভোগ করতে। তখন তার কোনও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভের পরিকল্পনা ছিলো না।
কুয়ালালামপুরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী তার এক পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা হয়। ইসলাম নিয়ে তার সাথে অনেক কথা হয়। বিশ্বাস, উদ্দেশ্য এবং শান্তি সম্পর্কে আলোচনা তাকে
ইসলামের প্রতি আগ্রোহী করে তোলে। নিজের ভারসাম্য, ধৈর্য এবং ঈশ্বরের সাথে সরাসরি সংযোগের উপর ইসলামের জোর দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তার বন্ধু তাকে পুত্রজায়ার একটি মসজিদ পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মসজিদে পা রেখেই মুসল্লিদের প্রশান্তি দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। পরে তিনি এই অভিজ্ঞতাকে শান্তিপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছিলেন, যা তার আগে কখনও হয়নি। সেই মুহূর্তটি তার হৃদয়ে কৌতূহলের বীজ বপন করেছিলো, যা তাকে ধর্ম সম্পর্কে জানতে উৎসাহ জুগিয়েছিলো।
জাপানে ফিরে আসার পর তিনি পবিত্র কুরআনের অনুবাদ পড়ার পাশাপাশি ইসলামী পণ্ডিতদের বক্তৃতা শুনতে শুরু করেন এবং ইসলাম অনুশীলনকারী মুসলমানদের সাথে আলোচনায় অংশ নিতে থাকেন।
মালয়েশিয়া থেকে ফিরে আসার পর ওই মাসেই তিনি টোকিওর একটি ইসলামিক কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার সময় টিকটকে হিজাব পরে একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তার এই পরিবর্তন তার অনুসারীদের অবাক করে দেয়। ভিডিওটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে গেলে ভক্ত এবং মিডিয়ার কাছ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসে।
ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্তে তিনি যেমন সমালোচিত হয়েছিলেন, তেমনি প্রশংসাও পেয়েছিলেন। তবে, বিশ্বের অন্য পর্ন তারকারা তার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
তবে, রে অবিচল ছিলেন। তিনি ইসলামী শিক্ষা অনুশীলন, ধর্মীয় ক্লাসে যোগদান এবং বিশ্বাস সম্পর্কে আরও গভীরভাবে মনোযোগী হন। তখন তিনি খোলাখুলিভাবে সমালোচকদের বলেছিলেন, ইসলাম গ্রহণ তার এবং ঈশ্বরের ব্যক্তিগত বিষয়।
তিনি বলেছিলেন, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন, নাকি তার পাপ ক্ষমা করা হবে না, তা অন্যদের বিচার করার বিষয় নয়। তিনি মানুষকে তার নিজের উদ্দেশ্য এবং ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের উপর মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান, তার কাছে জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে।
২০২৫ সালের প্রথম দিকে, তার আধ্যাত্মিক যাত্রা নতুন গভীরতায় পৌঁছায়। তিনি কিয়োটোতে তার বাবা-মায়ের বাড়ির একটি রূমে নামাজ পড়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেন, যা ইসলামের প্রতি তার দৃঢ় অঙ্গীকারকে নির্দেশ করে।
তখন তিনি সিঙ্গাপুরের একটি পডকাস্টে বলেছিলেন, 'আমি আমার ব্যবসার দেখাশোনা করছি, আমার বিশুদ্ধ নিয়ত আল্লাহর কাছে সমর্পণ করছি।'
পডকাস্টে তিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি এখনও পর্ণ সিনেমা তৈরি করছেন, যেগুলো ইসলাম গ্রহণের আগে চিত্রায়িত করা হয়েছিলো। এগুলোর কাজ শেষ হলে তিনি আর নতুন করে কোনো পর্ন সিনেমায় অভিনয় করবেন না, এবং তা বানাবেনও না।
রে বলেন, ধর্মান্তরিত হওয়ার সময় তিনি অভিভূত হয়েছিলেন যে অনেক মুসলিম তার অতীতকে মূল্যায়ন করেননি, উপরন্তু তারা তাকে মক্কা থেকে আনা খেজুর, বই এবং নামাজ পড়ার জন্য একটি জায়নামাজ উপহার দিয়েছিলেন। এতে আমি কেঁদেছিলাম। কারণ তারা আমার খারাপ দিক বিচার না করেই সমর্থন দিয়ে ছিলেন, বলেন তিনি।
পর্নো জগতের কিছু ভক্ত তার নতুন ধর্মবিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি অবিচল থাকেন। এবং গত রমজানের শুরুতে তিনি ইনস্ট্রাগ্রামে পোস্ট করেন, আমি আশা করি আমরা সকলেই আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকবো। এবং প্রিয়জন, পরিবার, ভাইবোনদের সঙ্গে একটি সুন্দর মাস কাটাবো। তিনি লিখেছেন, 'আমি খুবই উত্তেজিত। আশা করি আল্লাহ আমাকে এই মাসটি ঈমানের সঙ্গে কাটানোর শক্তি দেবেন।
ইসলাম গ্রহণ করে আধ্যাত্মিক এবং মানসিক শান্তি পেলেও তার জন্য খারাপ খবর হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তিনি লাখ লাখ অনুসারী হারিয়েছেন।
তবে, তিনি এতে বিচলিত নন, বরং তিনি এখন তার সোশ্যাল মিডিয়ার পেজ থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের সব কন্টেন্ট সরিয়ে ফেলেছেন।