শিডিউল বিপর্যয়ে ছয় দিনের ইন্ডিগোর ধস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩:২০, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ভারতের বৃহত্তম বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগো টানা ছয় দিন ধরে চলা অব্যবস্থার পর যাত্রীদের কাছে ৬১০ কোটি রুপি টিকিট ফেরত দিয়েছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরে আটকে থাকা ৩,০০০–এর বেশি ব্যাগেজও যাত্রীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রণালয় এই তথ্য প্রকাশ করে।
গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হলে লাখো যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। নির্দেশনা অনুযায়ী রোববার রাত ৮টার মধ্যে সব রিফান্ড সম্পন্ন করার কথা ছিল; ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে—ফেরত প্রক্রিয়ার বেশির ভাগই শেষ হয়েছে, বাকিটাও দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
ইন্ডিগোর বিবৃতি অনুসারে, রোববার ৬৫০টি ফ্লাইট বাতিল হলেও ১,৬৫০টি উড়ান নির্ধারিত সূচিতে পরিচালিত হয়েছে। প্রতিদিন সাধারণত ২,৩০০টির মতো ফ্লাইট পরিচালনা করে সংস্থাটি। শুক্রবার এ সংখ্যা নেমে যায় মাত্র ৭০৬–এ। তবে রোববার পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস মিলেছে।
এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, ১৩৮টির মধ্যে ১৩৭টি গন্তব্যেই তাদের সার্ভিস সচল আছে এবং যাত্রীদের সুবিধার্থে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত টিকিট বাতিল ও রিবুকিংয়ে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ইন্ডিগোর সিইও পিটার এলবার্স এক ভিডিওবার্তায় বলেন, “আমরা ধাপে ধাপে পুরনো অবস্থায় ফিরব। যাত্রীদের সহায়তার জন্য আলাদা ‘সাপোর্ট সেল’ গঠন করা হয়েছে, রিফান্ড ও রিবুকিং সমস্যার সমাধান দ্রুত দেওয়া হচ্ছে।”
ভারতের বেসামরিক বিমান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএর নতুন ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ বিধি কার্যকর করা শুরু করতেই এই জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নতুন নিয়মে—পাইলট ও কেবিন–ক্রুকে প্রতি সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক বিশ্রাম, প্রতি সপ্তাহে একজন পাইলট মাত্র ২টি নাইট ল্যান্ডিং করাতে পারবেন (আগে ছিল ৬)সপ্তাহে পরপর দুই দিন নাইট ডিউটি দেওয়া যাবে কেবল একবারই
সংস্থাগুলোর অনুরোধে নিয়ম কার্যকর বারবার পিছোলেও দিল্লি হাই কোর্টের নির্দেশে ডিজিসিএ ধাপে ধাপে নিয়ম বাস্তবায়ন শুরু করে।
নিয়ম মানতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে ইন্ডিগো—কারণ তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফ্লাইট রাতেও পরিচালিত হয়। পাইলট ও ক্রু–সংখ্যার ঘাটতির কারণে স্বাভাবিক অপারেশন ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি চরমে পৌঁছালে ডিজিসিএ শনিবার ইন্ডিগোকে শোকজ নোটিশ দেয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চাইলে সংস্থাটি অতিরিক্ত সময় প্রার্থনা করে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটে সবচেয়ে সস্তা ও বৃহৎ সার্ভিস প্রোভাইডার হওয়ায় ইন্ডিগোর ফ্লাইট সংখ্যা বিপুল।
দেশজুড়ে ৯০টি বিমানবন্দর, বিদেশে ৪৫টি গন্তব্য, প্রতিদিন ২,৩০০+ ফ্লাইট পরিচালনা।
রাতের ফ্লাইটের সংখ্যা বেশি হওয়ায় নতুন বিধির সর্বাধিক প্রভাব পড়েছে এই এয়ারলাইন্সের ওপর। ফলে পাইলট–সংকট, শিডিউল চাপ, ক্রমাগত বাতিল ফ্লাইট—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অভূতপূর্ব বিপর্যয়।
ইন্ডিগো যাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জানিয়েছে—স্টাফ ও পাইলট সংখ্যা বাড়ানোর কাজ চলছে, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করা হবে।
