মানুষ বিলুপ্ত হলে পৃথিবীর শাসক হবে অক্টোপাস!
বিজ্ঞান ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬:৪৫, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১৬:৫২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
অক্টোপাস ইলাস্ট্রেশন
মানবসভ্যতার ইতিহাস পৃথিবীর আড়াইশো কোটি বছরের তুলনায় চোখের পলকের মতো ছোট। তবুও এই অল্প সময়ে মানুষ প্রকৃতির প্রায় প্রতিটি স্তরে গভীর ছাপ রেখে গেছে—বনভূমি, নদী, সমুদ্র, বায়ুমণ্ডল, খনিজ সম্পদ—সবই মানুষের পরিবর্তনের সাক্ষী। কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, কোনও প্রজাতিই চিরস্থায়ী নয়। মানুষ একদিন যদি পৃথিবী থেকে হারিয়েও যায়, জীবন থেমে থাকবে না—বরং নতুনভাবে বিকশিত হবে। প্রশ্ন হলো—তখন পৃথিবীর হাল ধরবে কে?
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী প্রফেসর টিম কুলসন মনে করেন, মানুষ হারিয়ে গেলে পৃথিবী আবার নিজের ছন্দে ফিরে যাবে। তার গবেষণা ও বই দি ইউনিভার্সিটি হিস্টোরি অব আস–এ তিনি দেখিয়েছেন, বিবর্তন সবসময়ই পরিবেশভিত্তিক—যেখানে উপকারী মিউটেশন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
কুলসনের মতে, বিলুপ্তি কোনও প্রজাতির জন্যই অস্বাভাবিক নয়। “বিলুপ্তি সব প্রজাতির ভবিষ্যৎ—মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়,” বলে তিনি সতর্ক করেন। তবে মানুষের অনুপস্থিতি মানেই পৃথিবী ফাঁকা হয়ে যাওয়া নয়—বরং নতুন বুদ্ধিমত্তার জন্ম হতে পারে।
অনেকে মনে করেন, মানুষের ঘনিষ্ঠ প্রজাতি—প্রাইমেটরা—মানুষের জায়গা নেবে। কিন্তু কুলসন এতে সন্দিহান।
কারণ—প্রাইমেটরা অতিরিক্ত সামাজিক নির্ভরশীল, পরিবেশগত বড় পরিবর্তনে টিকে থাকা কঠিন, জটিল সামাজিক কাঠামো সহজে ভেঙে যেতে পারে।
তাহলে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ “ডমিন্যান্ট স্পেসিস” কারা?
অপ্রত্যাশিত উত্তর: অক্টোপাস!
হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরা অবাক করা এক সম্ভাবনার কথা বলছেন—অক্টোপাস ভবিষ্যতে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান, প্রভাবশালী প্রজাতি হয়ে উঠতে পারে।
কেন অক্টোপাস?
অসাধারণ সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
রঙ বদল ও শরীর সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে যোগাযোগ
সরঞ্জাম ব্যবহার করার ক্ষমতা
বিকেন্দ্রীভূত স্নায়ুতন্ত্র ও উন্নত চিন্তাশক্তি
পরিবর্তনশীল পরিবেশে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা
গবেষণাগারে এমনকি দেখা গেছে—অক্টোপাস রাতে ট্যাঙ্ক থেকে চুপিচুপি বেরিয়ে পাশের ট্যাঙ্কে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে, আবার নিজের ট্যাঙ্কে ফিরে যায়!
এমন বুদ্ধিমত্তা অন্য কোনও সমুদ্রপ্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায় না।
কুলসন বলেন, “উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অক্টোপাসরা ভবিষ্যতের সভ্যতা-নির্মাতা প্রাণীতে পরিণত হতে পারে।”
মানুষ একদিন না থাকলেও পৃথিবী থেমে থাকবে না। বরং তার গভীর অরণ্য, সাগর, বিশাল ভূখণ্ডে জন্ম নেবে নতুন জীবন, নতুন বুদ্ধিমত্তা।
হয়তো আজ যাদের আমরা কেবল সমুদ্রের আকর্ষণীয় প্রাণী মনে করি, একদিন তারাই হয়ে উঠবে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ শাসক।
