লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিয়ে ইসিকে আপত্তি জানাল জামায়াত
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭:০৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হিসেবে মানতে নারাজ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: সংগৃহীত
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে লেভেল প্লেইং ফিল্ড হিসেবে মানতে নারাজ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি ইসিকে বলেছেন, এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, কিছু ইনফরমেশন গ্যাপ, কিছু অস্পষ্ট অবস্থা— এগুলো পরিষ্কার করার জন্যই আজকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমরা মিলিত হয়েছিলাম। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা তাদের (ইসি) বলেছি, উনারা নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেননি। বিদ্যমান অবস্থার কিছু তথ্য প্রমাণ স্পেসিফিকভাবে আমরা তাদের সামনে তুলে ধরে বলেছি এই অবস্থা থাকলে এটাকে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হিসেবে গ্রহণ করবো না। সুনির্দিষ্টভাবে আপনাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরে কমিশনের কাছে সব এখতিয়ার চলে আসবে। প্রশাসনকে যথাযথভাবে নিরপেক্ষ রাখা প্রয়োজন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা বলেছি, যদি দেখি যে তফসিল ঘোষণার পর কোনও কর্মকর্তা খুব নগ্নভাবে তার নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করছেন। আমরা এগুলো আপনাদের (ইসি) নোটিসে আনবো। উনারা (ইসি) কথা দিয়েছেন, সুনির্দিষ্টভাবে নোটিশ আনলে তারা তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আইনশৃঙ্খলার মাঝে মাঝে গুরুতর অবনতি দেখা যাচ্ছে। একটা দলের সভার ওপর আরেক দলের হামলা, এমনকি নারী ভোটাররাও গণসংযোগে নেমে হামলার শিকার হচ্ছেন। এসব পরিস্থিতি নিয়ে এবং তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু হবে, কী ধরনের আশঙ্কা আছে, কীভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবেন– এসব বিষয়েও নির্বাচন কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের অভিযান নামে চলছে। কিন্তু এটাকে আরও কার্যকর, ফলপ্রসূ করা এবং ৫ আগস্টের পর সারা দেশের থানাগুলো থেকে লুটপাট হওয়া অস্ত্র কতটুকু উদ্ধার হলো? অবৈধ অস্ত্রধারীরা যারা নির্বাচনে ডিস্টার্ব করতে পারে, তাদের গ্রেফতার অভিযান নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
প্রবাস িপ্রবাসীদের ভোট সহজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রবাসী যারা ভোটার রেজিস্ট্রেশন করছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়াটা অনেকে জটিল মনে করছেন। এনআইডি, পাসপোর্ট বা অন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস না হলে তা হচ্ছে না। এটাকে আরও সহজ করে প্রবাসী ভোটারদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা কীভাবে করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের কথা রয়েছে। সিইসির সঙ্গে বৈঠকে জামাতের পক্ষ থেকে ভোটের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণার ওপর জোর দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে মিয়া গোলাম পারওয়ার বলেন, সরকার ও পলিটিক্যাল পার্টির স্টেকহোল্ডার অর্থাৎ দলগুলোর কমিটমেন্ট অনুযায়ী ঘোষিত যে টাইমলাইন আসন্ন রমজানের পূর্বেই নির্বাচন, সে অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার সময়টা একেবারেই পেরিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সুস্পষ্ট ঘোষণা সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত কী, সেটা জানার জন্যই মূলত আজকের আলোচনায় আমরা ইস্যুটাকে রেজ করেছি।
তিনি বলেন, অনাস্থা নিয়ে আমরা আসিনি, কিন্তু জাতি মনে করছিল, তাদের কমিটমেন্ট অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিলটা ঘোষণা হয়তো হয়ে যাবে। সময়টা যেন পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা এটাকে পরিষ্কার করার জন্য শঙ্কা নিরসণের জন্য অনেকগুলো ইস্যুর মধ্যে এটাকে তুলে ধরেছি।
ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভোট কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণের জন্য একটা অন্যতম ইস্যু। ইসি বলছে, এটা ব্যয়বহুল। আমরা বলেছি, সরকারের প্রচুর অর্থ বিভিন্ন কাজে ব্যয় হয়। আমরা আরও বলেছি, জাতীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন গণতন্ত্রের দেশের শান্তিশৃঙ্খলা নিরপেক্ষতা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু হতে পারে না।
