কারাগারে ফিলিস্তিনিকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস
ইসরায়েলের সামরিক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১:২৮, ৩ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ২১:৪৯, ৩ নভেম্বর ২০২৫
দক্ষিণ ইসরায়েলের এসডিই টাইমান কারাগারে এক ফিলিস্তিনি বন্দির ওপর সৈন্যদের নির্যাতনের ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় সাবেক সামরিক প্রসিকিউটর জেনারেল ইয়িফাত টোমার-ইয়েরুশালমকে সোমবার গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ।
স্থানীয় গণমাধ্যম কান জানায়, ইয়িফাত টোমার-ইয়েরুশালমের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে বাধা, বিশ্বাস ভঙ্গ, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তিনি সেনাপ্রধান, সুপ্রিম কোর্ট, অভিযুক্ত ও জনসাধারণের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় সাবেক প্রধান সামরিক প্রসিকিউটর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মাতান সোলোমেশকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশের ধারণা, সোলোমেশ জানতেন টোমার-ইয়েরুশালম ভিডিও ফাঁসের সঙ্গে জড়িত, কিন্তু তদন্ত শুরু হলে তিনি বিষয়টি গোপন রাখেন।
তেল আবিব ম্যাজিস্ট্রেট আদালত টোমার-ইয়েরুশালমের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। বিচারক শেলি কোটিন বলেন, তদন্তের গুরুত্ব ও প্রাথমিক প্রমাণ বিবেচনায় তাকে হেফাজতে রেখে তদন্ত চালানো প্রয়োজন। পুলিশের আবেদনে সোলোমেশেরও পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
২০২১ সালে দায়িত্ব নেওয়া টোমার-ইয়েরুশালম গত শুক্রবার পদত্যাগ করেন। সংবাদমাধ্যম হা-আরেটজের তথ্যমতে, সেনাপ্রধান এয়াল জামিরকে পাঠানো পদত্যাগপত্রে তিনি লেখেন, ‘সেনাবাহিনীর আইন প্রয়োগব্যবস্থার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণার জবাব দিতে আমি কিছু উপকরণ গণমাধ্যমে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘যা কিছু সংবাদমাধ্যমে পৌঁছেছে, তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।’
ভিডিও ফাঁসের পর থেকেই দেশটির ডানপন্থি রাজনীতিকরা তার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘গুরুতর অভিযোগের কারণে তিনি আর দায়িত্বে ফিরবেন না।’
জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতমার বেন-গভির জানান, টোমার-ইয়েরুশালমকে নিরাপত্তাজনিত কারণে কড়া তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, এসডিই টাইমান কারাগারের নির্যাতনের ঘটনাটি ইসরায়েলের ভাবমূর্তির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর।
২০২৪ সালের আগস্টের ফাঁস হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাতে-পায়ে বাঁধা এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মাটিতে উপুড় করে কয়েকজন সৈন্য ঢাল দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। নির্যাতিত ওই বন্দিকে পরে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তদন্তে জানা যায়, গত বছরের ৫ জুলাই তাকে এসডিই টাইমান কারাগারে আনার পর সৈন্যরা তাকে মারধর করে একাধিক হাড় ভেঙে ফেলে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ সৈন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে আদালতের গোপনীয়তা রক্ষায় তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তারা কেউই হেফাজতে নেই।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েলের কারাগারে ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুও আছে। এসব বন্দি শারীরিক নির্যাতন, ক্ষুধা ও চিকিৎসা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন বন্দি হেফাজতে মৃত্যুবরণও করেছেন।
